আরও দুইটি ড্রিমলাইনার আসছে বিমান বহরে

57

রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি বোয়িং এর তৈরি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। বোয়িং থেকে দুটি উড়োজাহাজ কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানের বহরে বর্তমানে চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার রযেছে। এবার যুক্ত হবে দুটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
১৭ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চতুর্থ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা ৭৮৭-৮ এনেছি চারটা। ড্যাশ বোম্বার্ডিয়ার আসছে আরও তিনটা। আমরা খবর পেয়েছি, বোয়িং আরও দুটি বিমান বিক্রি করতে চাচ্ছে। কেউ অর্ডার দিয়ে নেয়নি। সুযোগটা আমরা নেবো। আমাদের রিজার্ভ মানি যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। আমার মনে হয়, নিজেদের পয়সায় কিনতে পারবো, কোনও সমস্যা হবে না। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার দেশে আনতে সিয়াটলে গিয়েছিলেন বিমানের একটি প্রতিনিধিদল। সেসময় বোয়িং এর প্রতিনিধিরা দুটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার কেনার জন্য বিমানকে প্রস্তাব দেয়। চীনা একটি এয়ারলাইনসের অর্ডারে ওই দুটি ড্রিমলাইনার প্রস্তুত করা হলেও পরে তারা তা নেয়নি। দেশে ফিরে বিমানের কর্মকর্তারা বোয়িং এর প্রস্তাব বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানান। পরবর্তীতে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়। একটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের দাম দুই হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, যদিও বোয়িং এর সঙ্গে এয়ারলাইনসের ক্রয় চুক্তির কারণে দামের কিছুটা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করায় উড়োজাহাজ দুটির ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য জানতে বোয়িং এর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিমানের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার সিরিজের তিনটি উড়োজাহাজের মডেল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার, ৭৮৭-১০ ড্রিমলাইনার। এ তিনটি মডেলের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট প্রায় একই ধরনের হলেও আকার আয়তনে ভিন্ন। ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের দৈর্ঘ্য ১৮৬ ফুট। ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের দৈর্ঘ্য ২০৬ ফুট। ৭৮৭-১০ ড্রিমলাইনারের দৈর্ঘ্য ২২৪ ফুট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখন ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার দেশে আনতে সিয়াটলে গিয়েছিলাম তখন বোয়িং আমাদের উড়োজাহাজ দুটি দেখিয়েছে। চীনের হেইনান এয়ারলাইনস অর্ডার করলেও তারা উড়োজাহাজ দুটি নিচ্ছে না। বোয়িং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। এ করাণে চীনের হেইনান এয়ারলাইনস ক্রয় চুক্তি বাতিল করেছে। উড়োজাহাজ দুটি নিলে আমাদের সুবিধা হচ্ছে, আমাদের বহরে ড্রিমলাইনার আছে, ফলে এটি পরিচালনায় আলাদা করে পাইলট, প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া অর্ডার করলে নতুন করে বানাতেও অনেক সময় লাগে। ২০০৮ সালে আমরা ১০টির অর্ডার করেছিলাম, সেগুলো পেতে আমাদের প্রায় ১১ বছর লেগেছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিমান বহরে রয়েছে ১৬টি উড়োজাহাজ। এরমধ্যে ১০টি নিজস্ব উড়োজাহাজ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে তিনটি মডেলের ১০টি নতুন বিমান কেনার জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারে চুক্তি করে। নিজস্ব ১০টি উড়োজাহাজের মধ্যে রয়েছে— ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, বোয়িং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয়নি। আমরা কিনতে আগ্রহী, তাদের প্রস্তাব পেলে দামের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।