আমি ইশকুলে যাব

62

প্রতিদিন ওরা সকালে ঘুম থেকে উঠে। আজকেও তাই হল। আমি ভোরের কাগজ পড়ছি। আষাঢ়, শ্রাবণ দু’জন ছুটে আসে বসার ঘরে।
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির জোরে পরার ইচ্ছে নেই।
গুমোট গরম। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে, তবু গরম। শ্রাবণ ছোট, আাষাঢ় বড়। শ্রাবণ বেশি সময় আমার কাছে থাকে। ঘুম ভাঙলেই দৌঁড়ে আসে আমার ঘরে। শোবার ঘরের পাশাপাশি ছোট্ট পড়ার ঘর।
কখনও বই পড়ি, না হয় লিখি। শ্রাবণ তখন আমার ভোরের বন্ধু।
আজ পড়ার ঘরে নয়, বসার ঘরে ভোরের কাগজ পড়ছি। ঠিক তখনই শ্রাবণ বলে, দাদু, দাদু আমি ইশকুলে যাব।
আমি অবাক। শ্রাবণকে এখনও ইশকুলে ভর্তি করিনি। সে বলছে, ইশকুলে যাবে। আমিতো ভীষণ খুশি। শ্রাবণ ইশকুলে যাবার আগ্রহ দেখে। আমি হেসে বললাম, নিশ্চয়ই যাবে।
– কখন যাবে? প্রতিদিন কেউ ঘর থেকেই বের হও না।
আমি লজ্জায় কি বলব! ভেবে বললাম, এইতো দাদু, ক’দিন পরে তোমাকে ইশকুলে ভর্তি করিয়ে দেব।
শ্রাবণ ইশকুলে যাবে শোনে বড্ডো খুশি।
শ্রাবণ এবার বলে,
– দিদিভাই, তুমি ইশকুলে যাবে না? তুমিতো ইশকুলে যাও।
– যাব, ইশকুল খুললেই যাব। আাষাঢ় উত্তর দেয়।
আষাঢ় দাদুভাইকে বলে, দাদু আমাদের ইশকুল কখন খুলবে?
– সামনে খুলবে।
– কখন খুলবে ? কতদিন ইশকুল বন্ধ। আর ভাল লাগে না ঘরে। বন্ধুদের সাথে কথা নেই। ইশকুল মাঠে খেলতে পারি না। ম্যাডামের দেখা নেই, ভাল লাগে না দাদু।
– সব ঠিক হয়ে যাবে দাদু।
– দাদু এতদিন ইশকুল বন্ধ কেন?
– ওমা জান না, একটি মারাত্মক অসুখ এসেছে। তাই ইশকুল বন্ধ দিয়েছে সরকার।
– দাদু সরকার কে?
– যিনি দেশ পরিচালনা করে, মানে দেশের রাজা।
– ও তাই! দাদু অসুখটা কি?
– করোনা, খুব খারাপ রোগ দাদু। দেখা যায় না। ছোঁয়াচে রোগ। একজনের হলে, পাশাপাশি কেউ থাকলে তারও হবে। কারো একবার হলে বাঁচে না। মারা যায়। তাই সরকার ইশকুল বন্ধ দিয়েছে।
– তা’হলে দাদু খুব খারাপ রোগ।
– সত্যিই তাই।
– ও সে জন্যই বাবার অফিসও বন্ধ?
– হ্যাঁরে দাদু,শুধু অফিস নয়, সবকিছুই বন্ধ।
– কখন খুলবে দাদু।
– খুলবে। অবস্থা একটু ভাল হলেই সব খুলে দেবে। আবার ইশকুলে যাবে। মাঠে খেলবে।
-দাদু টিভিতে বলে যে, আজ চল্লিশজন মারা গেছে। সব করোনায় মরেছে দাদু!
– হ্যাঁরে দাদু।
– কি বিচ্ছিরি রোগ।
– সব ঠিক হয়ে যাবে দাদু। তখন তুমি ইশকুলে যাবে।
টুক করে শ্রাবণ বলে,
-দাদু, ইশকুল খুললে আমিও যাব।
হ্যাঁ দাদু তুমি ও যাবে।
আষাঢ়, শ্রাবণের চোখেমুখে ইশকুলে যাবার আনন্দ দেখে আমার মন ভরে যায়।