আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিন, আমরা শোধরে নেব

54

বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে যারা সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আমাদের প্রথম পরিচয় বাঙালি, দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে আমি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ নায়তো খ্রীষ্টান। আর যারা এদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল তারা মনে করেন তাদের প্রথম পরিচয় মুসলিম নাকি হিন্দু অথবা বৌদ্ধ। এরপরে তারা বাঙালি নাকি বাংলাদেশি সেই নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন। এখানেই হচ্ছে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য।
গতকাল শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগরের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী প্রবর্ত্তক সংঘের নবনির্মিত ৬তলা বিশিষ্ট ৫’শ ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা সম্বলিত মৈত্রেয়ী ভবনের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দুইলক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদ জীবন দিয়ে যেই স্বপ্ন এঁকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেই রাষ্ট্রকে বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করতে চায়। তারা রাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিল। রাষ্ট্রকে যারা সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ করতে চায় তারা যেন ভবিষ্যতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই লক্ষ্যে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। নাহয় রাষ্ট্রকে তারা সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ করে ফেলবে।
প্রবর্ত্তক সংঘের সভাপতি এড. সুভাষ চন্দ্র লালা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলম, প্রবর্ত্তক সংঘের সহ-সভাপতি অধ্যাপক রণজিৎ দে, সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্ত্তী।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটু পড়াশোনা করার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শুক্রবার সকালে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন রাষ্ট্রকে নাকি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, আর অবশিষ্ট কিছু নাই। আমি শুনেছি তিনি নাকি একসময় ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। আমিও পড়াতাম তাই তার প্রতি আলাদা একটা ধারণা ছিল। গত কয়েকদিনে তিনি যেভাবে কথা বলছেন তাতে মনে হয় তিনি পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। আমাদের দেশে এখন মাথাপিছু আয় হচ্ছে ১ হাজার ৯০৯ ডলার। কদিন পরে সেটা দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাবে। পাশের ভারত ও পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে অনেক কম। মির্জা ফখরুল যাই বলুক না কেন পাকিস্তানের টেলিভিশনে তাদের বুদ্ধিজীবি ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খাঁন আক্ষেপ করে বলেছেন বাংলাদেশ সমস্ত কিছুতে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। জাতি সংঘের মহাসচিব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রশংসা করেন। দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রশংসা করতে পারেননা শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাদের দলের নেতারা।

ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘তারা (বিএনপি) সকাল বিকাল তিন বেলা আমাদের গালি দিয়ে বলেন-আমাদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। সকালে একবার আমাদের সমালোচনা করে। দুপুরে একবার করে। বিকালে একবার করে। আর বলে কথা বলার অধিকার নেই। তিনবার কথা বলে বলে, কথা বলার অধিকার নেই। আমি অনুরোধ জানাব, আপনারা সমালোচনা করুন। দায়িত্বে থাকলে সমালোচনা হবেই। কাঁচা আম থাকলে সেখানে ঢিল পড়বেই। অন্ধের মতো অজ্ঞের মতো সমালোচনা করবেন না। একটু পড়াশোনা করে সমালোচনা করুন। আমাদের ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিন। আমরা শোধরে নেব।

প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে শতবর্ষী প্রবর্ত্তক সংঘের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার আহবান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজসেবায় অনন্য অবদান রেখেছে প্রবর্ত্তক সংঘ। সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের বিশেষ করে অনাথদের জন্য মহৎ কাজ করেছেন এই সংঘ।
চট্টগ্রামে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট আছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রবর্ত্তক বিদ্যাপীঠ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যদি মান যুক্ত হয় তবে সেটি হবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি পাঠদানে সীমাবদ্ধ থাকে তবে মানুষ গড়া সম্ভবপর হয়না।
প্রবর্ত্তক বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জীবনটা হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। যুদ্ধের ময়দানে থমকে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। জীবনটাও তেমন। জীবন চলার পথে অনেক আচ্ছাদন হারিয়ে যাবে। কিন্তু অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা থাকলে আত্মকেন্দ্রিকতা পরিহার করতে হবে। আত্মিক উন্নয়ন জরুরি। যে ছেলেটি স্কুলে পড়ে তার সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মেধা বিকাশের পাশাপাশি মননশীলতার চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একটি প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাস জেনে বড় হয়েছে। সমাজের আলোকিত মানুষ হিসেবে সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নাগরিকদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রবর্ত্তক সংঘের বর্তমান নেতৃত্বের দক্ষতায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, একসময় জীর্ণ ছিল এটি। আর্থিক সংকট কাটাতে আয়বর্ধক প্রকল্প, সরকারের সুদৃষ্টির কারণে সংঘের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সঙ্গে নতুন ভবনের ফলক উন্মোচন করে নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ও সিটি মেয়র।