আমাদের কথামালা ও ‘জীবনের গান’

126

জীবন স্থান-কাল-পাত্রভেদে একেক রকম। নদীর সাথে জীবনের তুলনা করা হয়। নদীর যেমন জোয়ার-ভাটা, জীবনের তেমন সুখ-দুঃখ। নদী ও জীবন দুটিই প্রবহমান। স্রোতহীন নদী মৃত, কর্মহীন অনালোকিত মানুষও তেমনি। মানবজীবনের স্বপ্ন, সম্ভাবনা, প্রত্যাশার নানা উপলব্ধি নিয়ে রচিতগ্রন্থ ‘জীবনের গান’। লিখেছেন তৃপ্তি সাহা। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে চৈতন্য প্রকাশনী।
‘জীবনের গান’ গ্রন্থটি ৩৯টি প্রবন্ধ, নিবন্ধ, স্মৃতিকথা, গল্প ও কবিতার সমাহার। বইয়ের ভ‚মিকায় কাজী শাহাদাত যথার্থ লিখেছেন, ‘বইপাঠ, বঙ্গবন্ধু, স্মৃতিতর্পণ, মানবিকতা, চাঁদপুরে যাপন, প্রকৃতি ও চারপাশের অর্থবহ বিভিন্ন ঘটনার অভিঘাত হয়ে উঠেছে তার লেখার প্রধান উপজীব্য।’ জীবনের গানের প্রতিটি লেখাতেই এ সুর প্রতিধ্বনিত হয়। তবে গ্রন্থের প্রধানতম উপজীব্য বিষয় মানবিকতা। লেখক যা-ই লিখেছেন তার ভেতরে মানবিকতা কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে ছিল। এ কারণেই হয়তো বইটির প্রারম্ভ রচনা ‘মানবতার জয়গান’। লেখক চেয়েছেন যারা পিছিয়ে পড়ে আছে নানাকারণে, এগিয়ে থাকা মানুষরা যেন তাদের হাত ধরে রাখে। কারণ সম্মিলিত উন্নয়ন ছাড়া জাতিগত অগ্রগতি অসম্ভব। অথচ সবকিছুতেই একধরনের অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে। পরীক্ষা, চাকুরি, বাডুজ্য, রাজনীতিসহ সবক্ষেত্রে। যেমন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ না পেলে আমাদের মন ভরে না। বাকি ফলকে আমরা সাফল্য মনে করি না। তৃপ্তি সাহা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিল গেটস বা রবীন্দ্রনাথ জিপিএ-৫ চক্রে আটকা পড়েননি। লেখকের প্রত্যাশা, কোনো ক্ষেত্রেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়, বরং সবাই মিলে মানবিক পৃথিবী গড়ি। ‘বেঁচে আছি আমরা’, ‘আমাদের খোকা’, ‘আলোকিত মানুষ চাই’, ‘কী যে ভালো লেগেছে আমার-এক ও দুই’, ‘শিশুবান্ধব শিক্ষা’, ‘বিষণœ ভাবনা’, ‘যারা গেয়ে গেছে জীবনের গান’, ‘সেজন সেবিছে ঈশ^র’, ‘অভয় দাও তো বলি আমার উইশ কী’ ইত্যাদি লেখায় বিভিন্ন বিষয় থাকলেও মানবিকতা বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে।
‘জীবনের গান’ গ্রন্থের লেখাগুলো স্বপ্নের কথা বলে। লেখক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। একই সাথে অসঙ্গতির বিরুদ্ধে লিখেছেন। বিশেষত শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতিতে তার চোখে ধরাপড়া অসঙ্গতিগুলি নিয়ে তিনি লিখেছেন। চেয়েছেন সঙ্গতিপূর্ণ সমাজ অসঙ্গতিকে মুছে দিক। এজন্যে চেয়েছেন সকলের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু আলোচ্য গ্রন্থের অন্যতম প্রধান বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দুটি প্রবন্ধ রয়েছে। এছাড়াও একাধিক লেখায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিপ্রসঙ্গ এসেছে বারবার। জীবনকে নানাভাবে দেখার স্মৃতি লিখেছেন তৃপ্তি সাহা। ‘আমাদের ইলিশ’, ‘তোমাদের একাল আমাদের সেকাল’ প্রবন্ধটি এক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখ্য। ছোটবেলার ইলিশের দাম সম্পর্কে লেখক লিখেছেন, ‘এখন যে ইলিশটি এক হাজার টাকায় পাওয়া যায়, তখন সে ইলিশটি দশ টাকায় বিক্রি হতো। একশ টাকায় দশটা ইলিশ কতদিন না এনেছে।’
তৃপ্তি সাহার গদ্যের ভাষা সরস। সাবলীল শব্দচয়নে লিখেছেন প্রতিটি গদ্য। তার বইটি যে কেউ পড়ে পাঠের আনন্দ পাবেন, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
‘জীবনের গান’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু। ১৭৬ পৃষ্ঠার মূল্য রাখা হয়েছে ২৮০ টাকা। বইমেলায় পাওয়া যাবে চৈতন্যে ২৫০-২৫১ নং স্টলে। আমি গ্রন্থটির সাফল্য কামনা করি।