আমরা জয়ী হলে কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না

47

উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকে আবারো বিজয়ী করার আহব্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচর হাসপাতাল মাঠে এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সার্বিকভাবে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে। এর ধারাবাহিকতা রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন। তাই আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট, তারা জনগণের কল্যাণে কিছু দিতে পারে নাই। কিন্তু নিজেরা অর্থসম্পদের মালিক হয়েছে, বিদেশে অর্থ পাচার করেছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করেছে’। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ঢাকার লালবাগে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এইভাবে তারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট এছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। মানুষকে কিছু দিতে পারে না, শুধু নিতে পারে। আর আওয়ামী লীগ আসে মানুষকে দিতে। কারণ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতের সংগঠন। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে। এই দশ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে আর ভবিষ্যতে যে পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা একান্তভাবে প্রয়োজন’।
খবর বিডিনিউজের
কামরাঙ্গীরচরের জনসভায় শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। যানজট দূর করার জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো ঢাকায় পাতাল রেল করা। তার সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নদীগুলো খনন করে নৌ পথও সচল করা হবে। ঢাকার সৌন্দর্য্য যেমন বৃদ্ধি হবে, নৌপথ চালু হবে, যানজটমুক্ত হবে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। গোটা বাংলাদেশব্যাপী আমাদের পরিকল্পনাতো আছেই’।
গত দশ বছরে বিভিন্ন হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চিত্রও নির্বাচনী সভায় তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কামরাঙ্গীরচরে বস্তিবাসীর জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং ঢাকা ঘিরে রিং রোড করে দেওয়ার উদ্যোগের কথাও তিনি বলেন। কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা তুলে ধরে কামরাঙ্গীরচরে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা জয়ী হয়ে আসতে পারি, এদেশে দারিদ্র্য থাকবে না’।
সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের অভাব দূর করার চেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই পানির অভাবের কারণে বিএনপির এমপিরা রুদ্ররোষে পড়েছিল। জনগণের ধাওয়া খেয়েছিল’। প্রতিটি এলাকায় জলাধার থাকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা কামরাঙ্গীরচরের খাল উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন। তিনি বলেন, ‘ভূমিখেকোরা ইতোমধ্যে এখানে অনেক অংশ দখল করে নিয়েছে। আজকে যারা খাল দখল করতে যাচ্ছে তাদেরকে বলব এই দখল করা বন্ধ করতে হবে’।
ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের জয়যুক্ত করার আহব্বান জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকা-২ আসনের কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৭ আসনের হাজী মো. সেলিম, ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-৯ আসনের সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-৫ আসনের হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশিদ, ঢাকা-৪ আসনের আবু হোসেন বাবলা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নৌকার দুই প্রার্থী ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ বিপু এবং ঢাকা-১০ আসনের ফজলে নূর তাপস নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে ব্যস্ত থাকায় জনসভায় আসতে পারেননি বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
জনসভা শুরুর আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে নেচে গেয়ে জনসভাস্থলে উপস্থিত হন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সভায় বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশ ছিল সমস্যার দেশ। শেখ হাসিনা মানুষের সমস্যা দূর করেছেন। আবারও তাকে নৌকায় ভোট দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে’।
ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তার বক্তব্যে দেশের উন্নয়নে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ওরা (বিএনপি-জামায়াত) কিন্তু আবারও ছোবল মারতে পারে। তারা ফনা তুলতে চাইবে। ড. কামাল হোসেন প্রতিদিন নিয়ম ভাঙছেন। প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ওরা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। আমরা এখন থেকেই ভোটকেন্দ্র পাহারা দেব’।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী মারুফা আক্তার পপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।