আমরা এখন দাতা নয় উন্নয়ন অংশীদার চাই

42

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতগণের প্রতি মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার, দেশীয় পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি এবং তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গতরাতে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের একথা বলেন। তিনি জানান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার, বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতগণের প্রতি স্বাগতিক দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি ও বিনিয়োগ বাড়াতে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আহব্বান জানান।
শেখ হাসিনা একই সঙ্গে রাষ্ট্রদূতগণের প্রতি তাদের কুটনৈতিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী ও অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মধ্যে যে কোনো ভুল বোঝাবুঝির মীমাংসার আহব্বান জানান। তিনি বলেন, সে ধরনের পরিস্থিতিতে বৈদেশিক সম্পর্ক জোরদার হবে, তবে তা হতে হবে সংলাপের মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরে সোমবার রাতে এখানে সাংরিলা হোটেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কাজ করার সময় মনে রাখতে হবে যে, বিশ্বটাকে এখন ‘বৈশ্বিক পল্লী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। তাই প্রত্যেককে একে অপরের সহযোগিতা বাড়ানোর মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণ, সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সর্বাধিক রেমিট্যান্স প্রেরণের কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা প্রায়ই প্রতারণার শিকার হয়। তাদের প্রত্যেকেরই নিরাপত্তার জন্য সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশে চাকরি প্রার্থী কোন ব্যক্তি যেন প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য ব্যাপক প্রচারণার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসস’র
শেখ হাসিনা বিদেশে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে সরকারি রেটের বাইরে অন্য কোনো প্রকার চার্জ গ্রহণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও আহব্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্যে ব্যাপকভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে। সরকার তাদের কল্যাণে ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা বাণিজ্যের জন্যও সেখান থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য যে পররাষ্ট্র নীতি রেখে গেছেন তার মূল কথা হলো ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রূতা নয়’।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে এক সময় বিদেশি দাতাদের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হতো। এ অবস্থা থেকে অর্থনীতিকে নতুন মর্যাদায় উন্নীত করতে দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকার এখন বøু ইকোনমি নিয়ে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে, বাংলাদেশ আগের অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে, এখন আমরা কোন দাতাকে ডাকি না, বরং আমরা ‘উন্নয়ন অংশীদার’ চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র কমে ইতোমধ্যেই ২০ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, এই দারিদ্রের হার আরো তিন শতাংশ কমাতে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নিজস্ব কৌশলে তাঁর সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছে, এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতার লিখিত আরেকটি বই ‘আমার দেখা নয়া চীন’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের সুযোগ পাওয়া আমাদের জন্য একটি বিশাল সৌভাগ্যের বিষয়।
তিনি বলেন, এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতগণ কমূসূচি গ্রহণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার জন্য আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি এবং আমরা পেয়েছি নিজেদের আত্মপরিচয় এবং পাসপোর্ট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যের নয়টি দেশে বাংলাদেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতগণ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তারা হলেন, গোলাম মসিহ (সৌদি আরব), মোহাম্মদ ইমরান (ইউএই), মেজর জেনারেল (অব) কে এম মমিনুর রহমান (বাহরাইন), এএফএম গাউসুল আজম সরকার (ইরান), এএমএম ফরহাদ (ইরাক), এসএম আবুল কালাম (কুয়েত), আবদুল মোত্তালেব সরকার (লেবানন), মো:গোলাম সারোয়ার (ওমান) এবং আসুদ আহমেদ (কাতার)।