আমনে ভরবে গোলা

78

বর্ষায় চট্টগ্রামে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এবার আমন চাষের শুরুতে কৃষকদের নানা প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয়েছে। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শে উচ্চ ফলনশীল ধানের চারা লাগিয়েছিলেন কৃষকরা। তাতে ফলনও হয়েছে বেশ। মাঠে ধান আধপাকা অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আমনের ক্ষতি করলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে, উচ্চ ফলনশীল আমনে কৃষকের গোলা ভরবে বলেই আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমন ধান কাটার মধ্য দিয়ে বিস্তীর্ণ জনপদে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব।
এদিকে, বাম্পার ফলনে কৃষকের গোলা ভরলেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মনের সংশয় কাটছে না। দেরিতে বর্ষার আগমণের কারণে দুুই দফায় বীজতলা তৈরি, শ্রমিকদের মজুরিসহ সবমিলিয়ে উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।
চট্টগ্রামের অন্যতম শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলের কৃষক ফনিন্দ্র দাশ জানান, এবার রোপা আমনে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত প্রতি কানি জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় দশ হাজার টাকা। তার নিজের হিসেবে এবার কানিপ্রতি ধান মিলবে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকার। ধানের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচও উঠে না আসার সংশয় রয়েছে। এবার বর্ষার শুরুতে প্রত্যাশিত বৃষ্টি না হওয়ায় দুই দফা বীজতলা তৈরির কারণে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ৩১ অক্টোবর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে চলতি আমন মৌসুমে আভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ছয় লাখ টন ধান ও চার লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে তিন লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী পয়লা ডিসেম্বর শুরু হবে চাল সংগ্রহ অভিযান, চলবে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত। ধান সংগ্রহ অভিযান ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে একই সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এবার ২৬ টাকা দরে ধান, ৩৬ টাকা দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৭ হাজার ১০৫ হেক্টর বেশি। এরইমধ্যে কৃষকরা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছেন।
এছাড়া, এবার ৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন। সে হিসেবে এবার ৩৮ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। অধিক ফলনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামে আবাদযোগ্য জমিতে চলতি আমন মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এর আলোকেই কৃষকরা চাষ করছেন। জমির ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধানের পাশাপাশি স্থানীয় জাতের রাজাশাইল, কাজলশাইল, কালামোটা, চাক্কল, গিউস, বিন্নি, কালিজিরা ও বালাম ধানের আবাদ বেশি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমন চাষের জন্য দুটো জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। সার এবং চারা। দু’টার পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং তদারকি নিশ্চিত করা হয়েছে। চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো। তাই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও অর্জনেও আমরা আশাবাদী।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার জেলার আওতাধীন ১৪ উপজেলা এবং নগরীর তিনটি থানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে স›দ্বীপ উপজেলায়। চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বীপ উপজেলাটিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের এবং ১৯ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করা হয়। সবমিলিয়ে এসব জমিতে উৎপাদিত ধান থেকে ৪৮ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন চাল পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মীরসরাইয়ে ২১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ধান থেকে ৫৬ হাজার ৭৩৭ মেট্রিক টন চাল, সীতাকুন্ডে ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন, ফটিকছড়িতে ২২ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে ৬২ হাজার ৮৫৪ মেট্রিক টন, হাটহাজারীতে ৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৩১১ মেট্রিক টন চাল, রাউজানে ১১ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে ৩১ হাজার ৭৫৪ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে ৪২ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন, বোয়ালখালীতে ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার ২২ মেট্রিক টন চাল, পটিয়ায় ১২ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন, আনোয়ারায় ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৬৩২ মেট্রিক টন, চন্দনাইশে ৮ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে ২২ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন, লোহাগাড়ায় ১১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ৩১ হাজার ৩৮৬ মেট্রিক টন, সাতকানিয়ায় ১২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন এবং বাঁশখালীতে ১৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে ৪১ হাজার ৫৮৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে নগরের তিনটি থানার মধ্যে পাঁচলাইশে ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৯৩২ মেট্রিক টন, ডবলমুরিংয়ে ৪৯০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন এবং পতেঙ্গায় ৮৩০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।