আবৃত্তি-গানে মুগ্ধ একটি দিন

58

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। সবে পশ্চিমাকাশে রক্তিম সূর্যটি আড়াল হয়েছে। সন্ধ্যা নেমেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রাঙ্গণজুড়ে। আর্ট গ্যালারির দরজাটি সেজেছে রং-বেরংয়ের কাগজের ফুলে। দরজা পেরিয়ে আর একটু সামনে এগোলেই নজর কাড়ে গাঁদা ফুলে আবৃত একটি সংখ্যা। গোলাপের পাপড়িতে সজ্জিত সে সংখ্যাটি হল ‘১৭’। এটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলা আবৃত্তি সংগঠন উচ্চারকের ১৭ বছরে পদার্পণের স্মারক। গতকাল ছিল সংগঠনটির ১৭ বছরে পদার্পণ। তাই দিনটি উদযাপন করতে কবিতার সাথে পথচলা সংগঠনটির এমন শুদ্ধ রুচিসম্মত আয়োজন।
অনুষ্ঠান শুরুর আগেই শিল্পকলা একাডেমিতে ঢল নামে কবিতাপ্রেমী তরুণ-তরুণী, বিভিন্ন আবৃত্তি বন্ধুদল, বিশিষ্ট কবি, লেখক আর সংগীত শিল্পীদের। সবাই এসেছেন শুদ্ধ উচ্চারণ, শুদ্ধ করে বাংলা ভাষা বলতে শেখানো, ভাষাকে-বাঙালি সংস্কৃতিকে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সংগঠন উচ্চারকের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে। আবার কেউবা এসেছেন শুদ্ধের সাথে তাদের পথচলাকে উৎসাহিত করতে, অনুপ্রাণিত করতে। তারই আভাস মিলেছে শুভেচ্ছা জানাতে আসা বিশিষ্টজনের বক্তব্যে। স্বীকৃতি, অনুপ্রেরণা ও প্রশংসার সবক’টি শব্দই উচ্চারিত হয়েছে শীতের সন্ধ্যায় উচ্চারকের এ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সমস্বরে বেজে উঠে, ‘বুকে বাজে দ্রোহের বীণা/ মুখে সত্য উচ্চারণ/ আমরা মুক্ত উচ্চারক।’ কবিতার সংসারে সুরের সাথে মিতালিরই প্রমাণ যেন এ গান। তেমনই বলেছেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক তাহের। তিনি স্বাগত বক্তব্যে বলেছেন, আমরা মূলত কবিতা নিয়েই কাজ করি। তবে সুরটাকে সংযোজন করেছি বেশ কয়েক বছর হল। চর্যাপদের বেশ কয়েকটি গান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে উচ্চারক। এমনকি ভারতের কলকাতায় চর্যাপদেরই দুটি গান পরিবেশিত করেছে আমাদের আবৃত্তি দল। তিনি বলেন, কবিতা নিয়ে আমাদের সংসার।
তবে জন্মদিনটা একটু আড্ডা, একটু আনন্দে কাটাতে চাই।
পূর্বদেশের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ফারুক তাহের বলেছেন, সেই ২০০৩ সালে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষাকে তরুণরা যাতে শুদ্ধ রূপে ধারণ করতে পারে সে লক্ষ্যে এ সংগঠনটি গড়ে তুলি আমরা চার বন্ধু। তারপর থেকে আর থেমে থাকা হয়নি। বিরামহীনভাবে তরুণদের মাঝে শুদ্ধ উচ্চারণ, শুদ্ধ সংস্কৃতি আর শুদ্ধ মনন বিলিয়ে যাচ্ছি। চারজন দিয়ে শুরু হওয়া সে সংগঠন এখন ৫শ জনের পরিবার।
সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য আনিন্দ্য অথৈ অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুদ্ধের সাথে সংসার পেতেছি। আর সে সংসারটি হল উচ্চারক। অনেক সংগঠন রয়েছে দু-চার বছর পর হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায়নি আবৃত্তি সংগঠন। বরং আরো প্রসারিত হয়েছে শুদ্ধত্বের চর্চায়।
অনুষ্ঠানে আতিথেয়তায়ও ছিল বাঙালিয়ানার চর্চা। পিঠা-পুলি দিয়ে তারা আতিথিয়তা সেরেছেন। এসময় ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বোধন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, অঙ্গন, স্বপ্নবীণা, সন্দীপণসহ আরো অনেক সংগঠন। উচ্চারকের জন্মদিনে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী মোস্তাফা কামাল, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী কাবেরী সেন গুপ্তা, উদীচির কেন্দ্রিয় সহ সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, কবি কামরুল হাসান, কবি আকতার হোসাইন, জেলা কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু প্রমুখ।