আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (১৯৩৪-২০০১)

292

প্রখ্যাত কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালের বাবুগঞ্জের বাহেরচরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ ও ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ নামের দুটি দীর্ঘ কবিতার জন্য বেশি পরিচিত। তার পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান। ডাক নাম সেন্টু। বাবা আব্দুল জব্বার খান পাকিস্তান আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর সাত ভাই পাঁচ বোন। তারা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনে পরিচিত নাম। ভাইদের মাঝে রয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক সাদেক খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাহীদুল্লাহ খান বাদল। তার বোন বেগম সেলিমা রহমান সাবেক মন্ত্রী।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ হতে এমএ পাস করেন। ১৯৫৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনের উপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন।
১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে গবেষণা করার জন্য ফেলোশিপ পান। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলুর ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারের ফেলো ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। ১৯৫৭ সালে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। ১৯৮২ সালে সচিব হিসেবে অবসর নেন ও মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। কৃষি ও পানি সম্পদমন্ত্রী হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায়। ১৯৯৭ সালে একই সংস্থা থেকে পরিচালক হিসেবে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের পর ঢাকায় ফিরে একটি বেসরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবেও বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।
পঞ্চাশ দশকে বেড়ে ওঠা আধুনিক কবিদের মধ্যে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ অগ্রগণ্য। তার কাব্যিক আঙ্গিক ও শব্দ ব্যবহারে স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। লোকজ ঐতিহ্যের ব্যবহার করে ছড়ার আঙ্গিকে কবিতা লিখেছেন। প্রকৃতিকে কবিতায় বিশেষ দ্যোতনা নিয়ে হাজির করেছেন। বিশেষ করে তার গীতলভঙ্গি সহজেই পাঠককে আকর্ষণ করে।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- সাতনরী হার (১৯৫৫), কখনো রং কখনো সুর (১৯৭০), কমলের চোখ (১৯৭৪), আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি (১৯৮১), সহিষ্ণু প্রতীক্ষা (১৯৮২), প্রেমের কবিতা (১৯৮২), বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা (১৯৮৩), আমার সময় (১৯৮৭), নির্বাচিত কবিতা (১৯৯১), আমার সকল কথা (১৯৯৩) ও মসৃণ কৃষ্ণ গোলাপ।
তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হল- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯) ও একুশে পদক (১৯৮৫)। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ বিয়ে করেছিলেন ১৯৫৮ সালে। তার স্ত্রীর নাম মাহজাবীন খান। এই দম্পতির দুই ছেলে এক মেয়ে। তিনি ২০০১ সালের ১৯ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।