আবুল হুসেন (১৮৯৬-১৯৩৮)

55

আবুল হুসেন, প্রাবন্ধিক, চিন্তাবিদ, সমাজসংস্কারক। ১৮৯৬ সালের ৬ জানুয়ারি যশোর জেলার পানিসারা গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস যশোরের কাউরিয়া গ্রামে। পিতা হাজী মোহাম্মদ মুসা ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম।
১৯১৪ সালে আবুল হুসেন যশোর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ (১৯২০), বিএল (১৯২২) ও এমএল (১৯৩১) ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতার হেয়ার স্কুলে (১৯২০-২১) শিক্ষকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগের লেকচারার (১৯২১) এবং মুসলিম হলের হাউস টিউটর নিযুক্ত হন। ১৯৩২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি পেশায় যোগদান করেন। তিনি বাংলার বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত ওয়াক্ফ আইনের মূল খসড়া প্রণয়ন করেন।
আবুল হুসেন মুসলমান সমাজে আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো বিস্তারের উদ্দেশ্যে লেখনী পরিচালনা করেন। মননশীল প্রবন্ধকার হিসেবে তিনি কৃষক-সমাজের দুঃখ-দুর্দশার মুক্তির পথ নির্দেশ করেন তাঁর বাংলার বলশী গ্রন্থের প্রবন্ধসমূহে। রুশবিপ�বের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ‘কৃষকের আর্তনাদ’, ‘কৃষকের দুর্দশা’ ও ‘কৃষি বিপ্লবের সূচনা’ নামক প্রবন্ধ রচনা করেন। ঢাকায় যে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন হয় তাতে আবুল হুসেনই নেতৃত্ব দেন। তিনি ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ (১৯২৬) গঠন এবং এর মুখপত্র শিখা সম্পাদনা ও প্রকাশ করে এ আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও আবুল ফজল তাঁকে এ কাজে সাহায্য করেন। অন্ধভাবে শাস্ত্র ও সমাজবিধি পালন নয়, মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তি দ্বারা যাচাই করার পক্ষে তাঁরা মত প্রকাশ করেন। অবশ্য তাঁদের এ আন্দোলনের পথ নিষ্কণ্টক ছিল না। ঢাকার রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ থেকে বাধা এসেছিল। শেষে অবস্থা এরূপ দাঁড়ায় যে, আবুল হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ত্যাগ করে কলকাতায় যেতে বাধ্য হন।
বাঙালী মুসলমানদের শিক্ষাসমস্যা (১৯২৮), মুসলিম কালচার (১৯২৮), বাঙলার নদীসমস্যা, শতকরা পঁয়তাল্লিশের জের, সুদ-রিবা ও রেওয়াজ, নিষেধের বিড়ম্বনা, ঐবষড়ঃং ড়ভ ইবহমধষ, জবষরমরড়হ ড়ভ ঐবষড়ঃং ড়ভ ইবহমধষ, উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ গঁংষরস খধি রহ ইৎরঃরংয ওহফরধ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। এগুলির মধ্যে প্রথম তিনটি বিখ্যাত গ্রন্থ। মুক্তবুদ্ধি ও উদার চিন্তার অধিকারী আবুল হুসেন ছিলেন এ দেশে অসা¤প্রদায়িক সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ। মৃত্যুর পর বাংলা একাডেমী থেকে আবুল হুসেন রচনাবলী নামে তাঁর রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র : বাংলাপিডিয়া