আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৭৪)

297

রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ আবুল হাশিম ১৯০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের কাশিয়াড়ার জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুসলিম লীগ ও খেলাফত রব্বানী পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘দ্য ক্রিড অব ইসলাম’। ১৯২৩ সালের বর্ধমান মিউনিসিপল স্কুল থেকে আবুল হাশিম ম্যাট্রিকুলেশন, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯২৫ সালে আইএ ও ১৯২৮ সালে বি.এ পাস করেন। ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বর্ধমান আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হন। আবুল হাশিম ১৯৩০ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৬ সালে তিনি বর্ধমান থেকে নির্দলীয় পার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালের মুসলিম লীগে যোগ দেন। মুসলিম লীগের উদারপন্থী অংশ গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। অনেক প্রগতিশীল বাঙালি মুসলিম তরুণকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৩৮ সালে বর্ধমান জেলা মুসলিম লীগ সভাপতি ও ১৯৪২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের ৭ নভেম্বর মুসলিম লীগের কাউন্সিল সভায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তানকে একটি অখন্ড রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করা হয়। এতে ভারতের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পৃথক পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের কথাও তোলা হয়। সেই হিসেবে বাংলায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ৯ এপ্রিল দিল্লিতে ডাকা মুসলিম লীগের নবনির্বাচিত বিধায়কদের সভায় মুহম্মদ আলী জিন্নাহর পরামর্শে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন। এ প্রস্তাব উত্থাপনের পর বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম খুব দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করেন। এরপর ভাষাভিত্তিক স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টায় আবুল হাশিম বাঙালি কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে দেখা করেন। এদিকে ভারতের ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের তার চিফ অব স্টাফ লর্ড ইসমকে ভারত বিভাগের ভিত্তিতে একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ আইন সভায় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন। এর পর ১৯৫০ -এর দশকের শুরুতে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকায় আবুল হাশিম ১৯৫২ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি গ্রেফতার হন এবং প্রায় ১৬ মাস কারাভোগের পর মুক্তিলাভ করেন। এর পর থেকে তিনি খেলাফতে রব্বানী পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ পার্টির সভাপতি ছিলেন।
আইয়ুব খানের আমলে আবুল হাশিম ইসলামিক একাডেমির পরিচালক ছিলেন। এ পদে থাকার সময়ে তার উদ্যোগে কোরআন শরীফের মূল আরবি থেকে বাংলায় তর্জমা প্রকাশিত হয়। ওই সময়ও তিনি আইয়ুব খানের বাঙালিবিরোধী কার্যক্রমের প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশহ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তান সরকারের বেতারমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীন রেডিও-টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের ঘোষণা করলে তিনি এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে-The Creed Of Islam (1950), As I See It (1965), Integration Of Pakistan (1967), Arabic Made Eassy (1969), রব্বানীর দৃষ্টিতে (১৯৭০) ও In Retrospection (1974)। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও লেখক বদরুদ্দীন উমর তার ছেলে। আবুল হাশিম ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।