আবাসন ব্যবসার ‘মেঘ’ সরে যাচ্ছে

50

কোনো প্রতারক যেন রিহ্যাবের সদস্য থাকতে না পারে সে বিষয়ে নজর দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর র‌্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে চার দিনব্যাপী রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) দ্বাদশ বারের মত নগরীতে এই মেলার আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক ব্যবসায় ভালো-মন্দ আছে। এই খাতে কিছু কিছু প্রতারক ডেভলপারের কারণে সাধারণ ক্রেতারা খুব ভোগান্তিতে পড়েন। রিহ্যাবের সদস্যদের এ বিষয়ে ‘শক্ত পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ রাখা উচিত।
তিনি বলেন, সবাই দাবি করে আমরা রিহ্যাব সদস্য। কোনো রিহ্যাব সদস্য প্রতারণায় যুক্ত থাকতে পারবে না। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আপনারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন, সদস্য থাকতে পারবে না।
কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা আবাসন ব্যবসার মেঘ সরছে বলে মন্তব্য করে ভূমিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আবাসন ব্যবসার বয়স বেশি দিনের না হলেও শুরুটা ছিলো দুর্দান্ত। কিন্তু হঠাৎ করে একটা পর্যায়ে এসে আবাসন ব্যবসা খুব চ্যালেঞ্জর মুখে পড়ে গিয়েছে। তবে আমার মনে হচ্ছে, আবাসন ব্যবসার মেঘ সরছে। এ ব্যবসার একটা ভালো ভবিষ্যত আমি দেখতে পাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে সরকার বিগত ১০ বছর দেশে প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা- অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান এগুলো অ্যাড্রেস করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস বেড়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, জাতিসংঘের মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল- এমডিজি বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে পূরণ করেছে। এখন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল-এসডিজি পূরণের জন্য কাজ চলছে।
যেহেতু এসডিজি পূরণের অন্যতম শর্ত সবার জন্য নিরাপদ বাসস্থান, তাই আবাসন খাত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আশা করি সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আবাসন খাত সামনের দিকে শক্ত অবস্থান নিয়ে এগোবে, বলেন ভূমিমন্ত্রী
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আবাসন ব্যবসার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘অ্যাফোর্ডেবল’ হাউজিং। অর্থাৎ কম দামে বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট ক্রেতার কাছে তুলে দেওয়া। এ জন্য আপনারা ‘লেস প্রফিট, মোর ভলিউম’ নীতি অনুসরণ করতে পারেন। তবেই আবাসন ব্যবসায় গতি আসবে।
মন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলেন ভূমির উচ্চ মূল্যের কারণে বাংলাদেশে ‘অ্যাফোর্ডেবল’ হাউজিং সম্ভব হচ্ছে না। সিঙ্গাপুর, টকিও, হংককেও কিন্তু একই অবস্থা। জমির দাম নাগালের বাইরে। তবে তারা বসে নেই। মাইক্রো হাউজিং, মাইক্রো অ্যাপার্টমেন্ট চালু করে আবাসন ব্যবসা জমজমাট রেখেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, সে পথে যাওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না। শহর এলাকায় ১ হাজার স্কয়ার ফুট কিংবা এর চেয়ে ছোট জায়গায় দুই বেডের অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা যায়। এ রকম কনসেপ্ট নিয়ে আপনারা এগোতে পারেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, প্রত্যেক ব্যবসায় ভালো-মন্দ লোক আছে। একটা ব্যবসায় সব লোক ভালো হবে- এমনটা আশা করাও যায় না। গুটি কয়েক মন্দ লোকের কারণে আবাসন ব্যবসার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই এসব ফ্রডদের ধরতে হবে।
তিনি বলেন, একজন লোক তার সারা জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে প্লট কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে যান। কিন্তু কিনতে গিয়ে যখন প্রতারণার শিকার হন- তখন আবাসন ব্যবসার জন্য এটা মঙ্গল বয়ে আনে না। আশা করি এরকম অভিযোগ পেলে রিহ্যাব তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, আবাসন ব্যবসায় সবাই দাবি করে, তারা রিহ্যাবের মেম্বার। কিন্তু মেম্বারদের একটি রেটিং থাকা দরকার। সব কাজের মনিটরিং দরকার। কোনো মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে দ্রুত তা তদন্তের দরকার। দোষী প্রমাণিত হলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা দরকার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী।
পরে ফিতা কেটে ‘রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ারের’ উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।