আবার শাটলে গান গেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাই

155

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রথম বর্ষে থাকতে বন্ধুদের নিয়ে শাটল ট্রেনের বগিতে গলা ছেড়ে গান গেয়ে ক্যাম্পাসে যেতাম। অনেক বন্ধুরা তখন গান গাইতেন, যারা এখন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাদের নাম বলে লজ্জা দিতে চাই না। এখনও মনে হয়, সেই বন্ধুদের নিয়ে শাটলে গান গেয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারতাম! ব্যস্ততার কারণে হয়ে ওঠে না। এমন দিন আর কখনও আসবে কি-না জানি না। তবে আমি এমন দিন আবারো ফিরে পেতে চাই।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত প্রথম পুনর্মিলনী উৎসবে ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেন রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ? উৎসব উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম থেকে ৪৯তম ব্যাচের আট হাজারেরও বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।
মনোরম পরিবেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরবর্তীতে অনুষ্ঠান আয়োজনের আহবান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতি অপরুপভাবে সাজিয়েছে। আমি পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি, কিন্তু প্রকৃতির মনোরম পরিবেশের এমন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর খুব অল্প দেশে আছে। প্রকৃতি নিজের কোলে লালন করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে। আমরা চেয়েছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আশা করি, ভবিষ্যতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ক্যাম্পাসেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে এবং পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউজ রানা, সাবেক অর্থ সচিব মোসলেম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দীন আহমেদ, চাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক সাংসদ মাজাহারুল হক শাহ চৌধুরী, সাবেক ভিপি নাজিম উদ্দিন, সাবেক সচিব ও অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোরশেদুল আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ছাড়াও প্রাক্তন চার উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান, অধ্যাপক ড. এম বদিউল আলম, অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন ও অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। অনুভ‚তি প্রকাশ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও রাখেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমি খুব গর্বিত এমন বিরল সম্মানের জন্য। এতো প্রতিথযশা মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, আল্লাহ আমাকে অনেক বড় সম্মানে ভ‚ষিত করেছেন। আমি এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী ছিলাম, তারপর শিক্ষক ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছি। এই অঙ্গনের জন্য দোয়া করবেন। জ্ঞান সৃজন, জ্ঞান উৎপাদন ও গবেষণার মাধ্যমে যেন এগিয়ে যেতে পারে। এজন্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতা চাই। আমরা যেন পৃথিবীর মানচিত্রে নাম লেখাতে পারি। বক্তব্যের শেষে ‘আকাশভরা সূর্য, তারা বিশ্বভরা প্রাণ। পাহাড়ের মাঝে আমি পেয়েছি, পেয়েছি মোর স্থান, বিস্ময়ে তাই জাগে, জাগে আমার প্রাণ।’ রবীন্দ্র সঙ্গীতের লাইন দুটি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকে যেন বিশ্বমর্যাদায় আসীন হন, সেই কামনা করি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম।
তারা বলেন, প্রথম পুনর্মিলনী উদ্যোগের শুরুতে আমরা আশা করেছিলাম, হয়তো দুই-তিন হাজার প্রাক্তন এতে অংশ নেবেন। কিন্তু আপনাদের স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণে আট হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কাজ করা, মানবতার কল্যাণে কাজ করা। আমরা শুধু পুনর্মিলনী নয়, নিয়মিত সেমিনার সিম্পোজিয়াম, জব ফেয়ার আয়োজন করা হবে। বুলেটিন প্রকাশ করা হবে। প্রতি রেজিস্ট্রেশনের দুই হাজার টাকা করে আট হাজার প্রাক্তনের কোন টাকা খরচ করা হয়নি। এগুলো সংগঠনের স্থায়ী তহবিল গঠনের পাশাপাশি অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তির জন্যও তহবিল গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে সহায়তা করা হবে। এছাড়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের তালে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিরা। এরপর বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান হারুন। মধ্যাহ্নভোজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ, র‌্যাফেল ড্র-সহ নানা আয়োজন করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে প্রথম পুনর্মিলনী উপলক্ষে নগরীর বাদশা মিঞা সড়কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। রঙিন সাজের শোভাযাত্রাটি নগরীর সিআরবির শিরিষ তলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে বাউল সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।