আবারও রহস্যজনক আগুন

50

নগরীর চাক্তাই ভেড়া মার্কেট দ্বিতীয় বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে অন্তত ১৬৫টি বস্তিঘর ও দোকান পুড়ে গেছে। বস্তিতে বসবাসরত নিম্নআয়ের লোকজন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তারা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে অনেকে এ অগ্নিকান্ডকে রহস্যজনক বলে ধারণা করছেন। এর আগে এর পাশের বস্তিতে আগুনে শতাধিক ঘর পুড়ে যায় এবং দগ্ধ হয়ে মারা যান ৮ জন। চার মাসের ব্যবধানে এখানে আবারো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটল।
জানা যায়, ভেড়া মার্কেটের দ্বিতীয় এ বস্তিতে সকাল ৯টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে নগরীর বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনের ১৫টি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। এসব গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-সহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন জানান, সকালে বাকলিয়া ভেড়া মার্কেটে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, চাক্তাই, নন্দনকানন, চন্দনপুরা ও বন্দর স্টেশনের ৫টি ইউনিটের ১৫টি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের কাছে আগুন লাগার খবর আসে। আমাদের পাঁচটি ইউনিটের ১৫টি গাড়ি সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে ক্ষয়ক্ষতি পরবর্তীতে নিরুপণ করা হবে বলে তিনি জানান।
আগুনে অন্তত ১০০টি বসত ঘর ও চারটি দোকান পুড়ে গেছে বলে তিনি জানালেও স্থানীয়রা বলছেন ১৬৫টি ঘর পুড়ে গেছে।


বাকলিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাদের হিসাব মতে ১৬৫টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তারা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ বস্তিতে নি¤œআয়ের লোকজন বসবাস করতেন। তারা সকলেই দিনে আনে দিনে খান। তাদের কোনো সহায় সম্বল অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেন, দিনের বেলা হওয়ায় প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, এ বস্তিতে নিম্নআয়ের লোকেরা বসবাস করে আসছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখলে নিয়ে ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। চার মাসের ব্যবধানে আবারো আগুনের ঘটনা ঘটল। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ভেড়া মার্কেটের প্রথম বস্তিতে আগুন লাগে। ওই সময় আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান আট জন। এর দক্ষিণ পাশের বস্তিতেই বৃহস্পতিবার আগুন লাগে। দিনের বেলা হওয়ায় প্রাণহানি এড়ানো গেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা। ওই সময় আগুন নিয়েও রহস্য সৃষ্টি হয়। একটি প্রভাবশালী মহল জায়গা দখলে নিতে রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠে।
এবারোও আগুন নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশাল এলাকার এ বস্তি থেকে ভাড়াটিয়াদের তাড়িয়ে নতুন করে ঘর তৈরি করার জন্য চেষ্টা করছে একটি মহল। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা সরতে না চাওয়ায় এতে তাতে ব্যর্থ হচ্ছিল। একারণে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করেন অনেকে।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তে সব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করলে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আগুনে নিঃস্ব হওয়া দেড় শতাধিক পরিবার বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের সম্বল বলতে কিছুই বাকি নেই।