আবারও পানির দাম বাড়াতে চায় ওয়াসা

64

‘চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদিত প্রায় অর্ধেক পানি অপচয় হচ্ছে। এই অপচয় কমানো গেলে ওয়াসা যেমন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, তেমনি নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণও সম্ভব হবে।’স্বয়ং ওয়াসা বোর্ডের এমন মন্তব্য। ওয়াসার পানির অপচয় রোধ, গ্রাহকদের সমস্যা জানার জন্য গঠন করা হয়েছিল একটি তদন্ত কমিটি। অথচ সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার আগেই পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিল ওয়াসা। আজ বোর্ড সভায় এ প্রস্তাবের উপর আলোচনা হবে। তাছাড়া গ্রাহক প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়টিও আলোচনায় থাকছে।
বোর্ডসভায় মূল এজেন্ডায় রাখা হয়েছে পানির মূল্যবৃদ্ধি ও সুয়্যারেজ প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের বিষয়। তাছাড়া গত বোর্ড সভায় গ্রাহক হয়রানি ও পানির অপচয় নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আলোচনা এবং গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়নে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
প্রস্তাব অনুযায়ী প্রায় ৬২ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে চায় ওয়াসা। এতে আবাসিক খাতে ৬ টাকা ৮ পয়সা এবং অনাবাসিক খাতে ১৭ টাকা ৪৪ পয়সা করে প্রতি ইউনিটে (এক হাজার লিটার) দাম বাড়ানো হবে। আবাসিক খাতে বর্তমানে পানির দাম প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং অনাবাসিক খাতে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা। দাম বৃদ্ধির ফলে ইউনিট প্রতি আবাসিকে ১৬ টাকা এবং অনাবাসিকে ৪৫ টাকা হবে। বোর্ড সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তা কার্যকর করবে ওয়াসা।
এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
আইন অনুযায়ী, ওয়াসা বছরে একবার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করতে পারে। গত ফেব্রæয়ারিতে বোর্ড সভায় ৫ শতাংশ হারে আবাসিক ও অনাবাসিক খাতে পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন হয়। মার্চ থেকে মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হয়। ৫ মাসের মাথায় আবারও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াসা। যদিও এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে ওয়াসার প্রায় অর্ধেকের বেশি পানি অপচয় হয়। ওয়াসার হিসাবেও এনআরডব্লিও (অপচয়) আছে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত।
অন্যদিকে গত বোর্ড সভায় জানানো হয়, ২৭ হাজার গ্রাহক ৫ ইউনিটের কম ব্যবহার করেও বিল দিচ্ছে গড়ে ৩০ ইউনিট করে। এতে করে ওয়াসা প্রকৃত অপচয় গোপন করছে এমন অভিযোগে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। পরবর্তী সভায় (আজকের সভায়) প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা থাকলেও তদন্ত কাজ শেষ না হওয়াতে আজ প্রতিবেদন দাখিল করছেন না কমিটি।
ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও তদন্ত কমিটির প্রধান জাফর আহমদ সাদেক বলেন, তদন্ত কাজ এখনও শেষ করা সম্ভব হয়নি। পানির দাম বৃদ্ধি কোনো সমাধান নয়। অপচয় রোধ না করে দাম বৃদ্ধি করা হলে দুষ্টদের আরও সুযোগ দেওয়া হবে। গণমানুষের ব্যয় বৃদ্ধি করা আমার নেত্রীর দর্শন নয়। বোর্ড সভায় দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব উঠলে আমি এ বিষয়ে কথা বলবো।
এদিকে গত ২৯ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান সাক্ষরিত পৃথক দুটি পত্র দেওয়া হয় ওয়াসাকে। একটি পত্রে ওয়াসার গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে একজন ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত সংক্রান্ত বিষয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মতামত দিতে ওয়াসার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরেকটি পত্রে ওয়াসার চেয়ারম্যানকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাত কর্মদিবস শেষ হওয়ায় আজকের বোর্ড সভায় বিবিধ আলোচনায় বিষয়টিও উপস্থাপন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্যাবের একজন প্রতিনিধিও গ্রাহক প্রতিনিধি হিসাবে নাম প্রস্তাব আসতে পারে।
বোর্ড সদস্য জাফর আহমদ সাদেক বলেন, গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাব একজনের নাম প্রস্তাব করতে পারে। আমরা সে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করতে পারি। এটা সবচেয়ে ভালো হয়।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার সংযোগ আছে ৬৭ হাজার ২৭টি। এর মধ্যে আবাসিক খাতে ৬১ হাজার ৭৫৫টি এবং অনাবাসিক খাতে ৫ হাজার ২৭২টি। আবাসিক খাতে পানি সরবরাহ হয় মোট উৎপাদনের ৮৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং অনাবাসিক খাতে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আবাসিক খাতে ৬৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৬০ লিটার এবং অনাবাসিক খাতে ৯ লাখ ৮ হাজার ১৯০ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়, যা থেকে ওয়াসা বিল পায়।
পাঁচ মাসের ব্যবধানে পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্পর্কে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, পানির অপচয় রোধ করা, চুরি বন্ধ করা ও মিটার রিডারদের কারসাজি বন্ধ না করে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।