আবারও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস

52

পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহের মত শেষ পক্ষেও ফের ‘ইলশে গুঁড়ির’ আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এবারের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম সপ্তাহের যে কোনও দিন। দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন চার দশমিক পাঁচে নোঙর ফেলার পর এরইমধ্যে আবার চড়তে শুরু করেছে। আগের দু’দিনে বেশ খানিকটা চড়ার পর গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন পাঁচ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে সেই তেঁতুলিয়াতেই। সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ যথারীতি সবচেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা বা দু’দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। অসময়ের এই বৃষ্টিপাত শীতের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার পূর্বদেশকে বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্তার লাভ করা মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ কিছু কিছু এলাকায় প্রশমিত হতে পারে। এখন দিনের তাপমাত্রা কমতি আর রাতের তাপমাত্রা বাড়তির দিকে রয়েছে। যদিও তাপমাত্রার এই উঠানামা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের আলামত রয়েছে।’
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার দৃশ্যপটে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, নীলফামারি, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা করা হয়েছে কক্সবাজারে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ছিল সীতাকুন্ডে। বিভাগের বাকি এলাকাগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ তার ওপর থেকে ১৬ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই উঠানামা করেছে।
অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তুরে হাওয়ায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তাপমাত্রার পারদের পতন শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ওইদিন দেশের সর্বউত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরদিন আরও এক ডিগ্রি কমে তা আটের ঘরে নামে। কিন্তু এরপর থেকেই পারদের ঊর্ধ্বমুখী পথচলা শুরু হয়। টানা চারদিনে তিন ডিগ্রিরও বেশি চড়ার পর ফের পতন ঘটে পারদের। পারদের এই পতনমুখী প্রবণতার মধ্যেই আবহাওয়াবিদরা সারাদেশে শীত জেঁকে বসার আলামত দেখতে পান। এর জেরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বইতে শুরু করে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শীতের প্রথম ইনিংসের ওই ধাক্কায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাত দশমিক নয় ডিগ্রিতে নেমে আসে। এর আগে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জানানো হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে দেশের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং দু’টি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এমনিতেই জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস। তাই মেয়াদকালের দৈর্ঘ্য কমবেশি হলেও শীতের দাপট কিংবা হাঁড়কাপানো শীতের কামড় অনুভূত হবে জানুয়ারি মাসেই। ফেব্রূয়ারির মাঝামাঝি গিয়ে শেষ হয় বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাস। কাগজে-কলমে বিদায় নেয় শীতকাল। তবে, এবার তুলনামূলকভাবে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের স্থায়িত্বকালই বেশি হতে পারে। যাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম-বেশি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রির চেয়ে বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।