আবারও ক্ষমতায় আসছেন মোদি

44

ভারতে শেষ ধাপের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে প্রকাশিত দুই বুথফেরত জরিপে আবারও বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের ক্ষমতায় আসার আভাস পাওয়া গেছে। রিপাবলিক সি-ভোটার ও টাইমস নাও-ভিএমআর প্রকাশিত জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে, প্রায় তিনশ’র কাছাকাছি আসন পেয়ে আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এদিকে এ পর্যন্ত পাওয়া জরিপের ফলাফলকে গড় করে স¤প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ২৩ তারিখ ঘোষিত ফলাফলে ২৯৮টি আসন পেতে যাচ্ছে বিজেপি জোট। উল্লেখ্য, বুথফেরত জরিপের অনুমান যে সবসময় ঠিক হয়, তা নয়। ২০১৪ সালের জরিপের অনুমান ঠিক হলেও ২০০৯ সালের নির্বাচনে সঠিক অনুমান দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছিল জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
ভারতে কয়েক দশকের মধ্যে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে তিক্ততাপূর্ণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গতকাল রবিবার। দেড় মাস ধরে সাতটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আগামী ২৩ মে (বৃহস্পতিবার) ফল ঘোষণা করা হবে। আর তার আগেই বুথফেরত জরিপগুলো আভাস দিতে থাকবে কীভাবে মোদির বিজেপি, রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস, তাদের জোটভুক্ত দল ও অন্য দলগুলো কত সংখ্যক আসন পাচ্ছে।
রিপাবলিক সি-ভোটারের অনুমান, লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩০০টিরও বেশি আসন পেতে যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স-এনডিএ। একইরকম ফলাফল এসেছে টাইমস নাও-ভিএমআর’র জরিপেও। তারাও বলছে, তিন শতাধিক আসন নিয়ে বিজয়ী হতে যাচ্ছে বিজেপি। এনডিটিভি এ পর্যন্ত পাওয়া জরিপের ফলাফলের গড় করে এনডিএ জোটের ২৯৮টি আসন পাওয়ার সম্ভাব্যতার কথা জানিয়েছে। তাদের দেওয়া ধারণা অনুযায়ী, জোটবদ্ধভাবে কংগ্রেস পেতে যাচ্ছে ১২৮টি আসন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
২০১৪ সালে বুথফেরত জরিপগুলোর গড় করে আভাস মিলেছিল, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট পার্লামেন্টের ৫৪৫টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন পাবে। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পাবে ১০২টি আসন। তবে চূড়ান্ত ফলে এনডিএ ও ইউপিএ জোটের ব্যবধান হয়েছিল আরও বেশি। ২০১৪ সালে এনডিএ জোট ৩৩৬টি আসনে জয় পায়। আর তার আগের দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা ইউপিএ জোটের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা সে বছর কমে ৫৯-এ নেমে আসে। ২০০৯ সালে ১৮৬টি এনডিএ ও ইউপিএ জোট ১৯৭টি আসন পাবে বলে বুথফেরত জরিপে আভাস মিলেছিল। চূড়ান্ত ফল ঘোষণায় ১৬০টিরও কম আসন পেয়েছিল এনডিএ জোট। আর ২৬২টি আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসেছিল ইউপিএ।
ভারতে ২০১৯ সালে সাতটি ধাপে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যেকটি ধাপের ভোটগ্রহণের সময়ই বিজেপি ও রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার শেষ ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অংশ হিসেবে যেসব আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে তার মধ্যে মোদির আসন বারানসিও রয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণায় আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে জাতীয়তাবাদী প্রচারণা চালিয়েছে বিজেপি। এই জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে বালাকোটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সা¤প্রতিক বিমান হামলার ঘটনাকে। একে মোদির শক্তিশালী নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছে দলটির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদির কঠোর সমালোচনা করেছে বিরোধী দলগুলো। মোদির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভাজন গ্রহণের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিজেপি সরকার দেশের অর্থনীতিকে উপেক্ষা করছে বলেও অভিযোগ কংগ্রেসের।
নির্বাচনি প্রচারণায় প্রায় প্রতিদিনই পরস্পরকে দোষারোপ করতেন মোদি ও রাহুল গান্ধী। বিশ্লেষকরা বলছেন, ৬৮ বছরের নরেন্দ্র মোদি এখনও ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয়। কিন্তু তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের বিষয়টি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ১৪২টি জনসভায় অংশ নিয়েছেন মোদি। একদিনে পাঁচটি জনসভায়ও ভাষণ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে ভূমিধস জয় পেলেও এবার আসন খোয়াতে হবে বিজেপিকে। ফলে এবার পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও উত্তর প্রদেশে জোর দিয়েছে দলটি। নির্বাচনি প্রচারণায় কংগ্রেসের নজর ছিল উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কেরালার মতো রাজ্যগুলো। বিভিন্ন নির্বাচনি জনসভায় রাফাল দুর্নীতি, কৃষকদের দুর্দশা ও কর্মসংস্থানের অভাবের মতো বিষয়গুলোকে বিজেপিবিরোধী প্রচারণার হাতিয়ার করেছেন রাহুল।