আবরার হত্যায় ২৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট

30

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এই ২৫ জনের মধ্যে ১১ জন আবরারকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়। আর সেখানে উপস্থিতি এবং অন্যভাবে সম্পৃক্ততার কারণে বাকি ১৪ জনকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিবির হিসেবে সন্দেহের বিষয়টি ছিল আবরারের ওপর নির্যাতনের ‘একটি কারণ’। আসলে বুয়েট ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ‘উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত’ হয়ে গিয়েছিল।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। খবর বিডিনিউজের
পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জসিম উদ্দীন জানান, অভিযোগপত্রে মোট ২১টি আলামত, ৮টি জব্দ তালিকা যুক্ত করা হয়েছে।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন আবরারের বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ার আগে মিন্টো রোডে পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল।
তিনি বলেন, অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে ১৯ জনের নাম এজাহারেই উল্লেখ ছিল। পুলিশ তদন্তে নেমে আরও ৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে।
অভিযোগপত্রের ২৫ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক। তাদের মধ্যে -জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোর্শেদ এজাহারভুক্ত আসামি। আর মুজতবা রাফির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তদন্তে।
মনিরুল জানান, অভিযোগপত্রে মোট ৩১ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাদীপক্ষের ৬ জন ছাড়াও বুয়েটের সাতজন শিক্ষক, ১৩ জন শিক্ষার্থী এবং ৫ জন কর্মচারী রয়েছেন।
আবরার হত্যার বিচার হবে দ্রূতবিচার ট্রাইব্যুনালে : বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচার দ্রæতবিচার ট্রাইব্যুনালে হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আলোচিত এই মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দেওয়ার পর বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
আবরার হত্যাকান্ডের পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে দ্রুত বিচারের দাবি উঠেছিল।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যে কোনো মামলা ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৪৫ দিন সময় নিতে পারে আদালত।
আবরার হত্যাকান্ডের ৫ সপ্তাহের মধ্যে বুয়েটেরই ২৫ ছাত্রকে আসামি করে বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দেয় মামলাটির তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।
এখন বিচার শুরুর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আবেদন আসতে হবে।
দ্রুত এই বিচার শুরুর আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও।
আইনমন্ত্রী বলেন, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন আসতে হয়, আবেদন আসলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলা (নিষ্পত্তি) করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এবং দ্রুততার সাথে করার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ বিচারকার্য করব।
বিচার শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হলে এ বিচার প্রথম সময় হচ্ছে ৯০ দিন, এর পরে হচ্ছে ৩০ দিন, সর্বমোট ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন না করতে না পারলে পরে আরও ১৫ দিনের সময় আছে অর্থাৎ ১৩৫ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করার বিষয়টি দেখিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণ চেয়েছে নুসরাত হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত করার জন্য সেটাও সম্পন্ন করা হয়েছে, এরকম অনেক বলা যাবে। এখন দায়িত্ব বর্তেছে আবরার হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে।