আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ (১৯০০-১৯৮৬)

68

প্রগতিপন্থী রাজনীতিবিদ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ছিলেন অসাম্প্রদায়িক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামী। ভারত উপমহাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আশির দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অবধি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের জন্ম ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের তারুটিয়া গ্রামে। স্কুলে পড়ার সময় অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং সভা সমিতির মাধ্যমে কংগ্রেসের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেন। সেই সময় থেকেই জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ইসলাম ধর্মে শিক্ষা গ্রহণ শেষে লাহোরের এরশাদ ইসলামি কলেজে হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্ম ও তর্কশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। লাহোরে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় মুক্ত বুদ্ধিজাত প্রজ্ঞায় বিশিষ্টতা অর্জন করে তর্কবাগীশ উপাধি লাভ করেন। ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে ফিরে ইসলাম ধর্ম প্রচারে ব্রতী হন। এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসার সুযোগ হয় তাঁর। বাংলার কৃষকদের অবর্ণনীয় দুর্দশার চিত্র অবলোকন করে জমিদার ও মহাজনী শোষণ থেকে কৃষকদের মুক্তির লক্ষ্যে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন। ৫২-র আন্দোলনেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এ সময় তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে বঙ্গীয় বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগরে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা নেন। আশির দশকে এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে গঠিত ১৫ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ। লেখক হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। তর্কবাগীশের প্রকাশিত গ্রন্থে’র মধ্যে রয়েছে: ‘শিরাজীর স্মৃতি’, ‘সত্যার্থ প্রকাশের সত্যার্থ’, ‘সমকালীন জীবনবোধ’, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগের ছিন্ন পৃষ্ঠা’, ‘স্মৃতির সৈকতে আমি’ ইত্যাদি। ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট প্রয়াত হন আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ। সূত্র: বাংলাপিডিয়া