আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত ২৫

19

দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের অপসারণ, ছাত্রলীগের হামলা এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর রাস্তায় নেমে আসেন তারা। বিশেষ করে, বিভিন্ন ছাত্রী হল থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে মিলিত হন তারা। সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ স্থলের পাশেই উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ঘেঁষে পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনপন্থী শিক্ষক এবং শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন।
এর আগে দুপুরে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশের কথা জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে সাড়ে ৫টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশের পর হল ছাড়তে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অনেক শিক্ষার্থী নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘বিভিন্ন হল থেকে সংবাদ আসছে, প্রশাসনের লোকজন জোর করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে। কিন্তু হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোর করে বের করে এ জমায়েত কমাতে পারবেন না। যত নিপীড়ন চালাবেন এই জমায়েত তত বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুনেছি এখানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আপনারা হামলা করতে পারেন কিন্তু আমি শিক্ষক হিসেবে আমার কোনও শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করতে দেবো না।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় আট জন শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ‘ধর ধর’, ‘জবাই কর’ ¯েøাগান দিয়ে হামলায় উসকানি দিতে দেখা গেছে।
এর আগে সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাসভবনের সামনের ফটকে অবস্থান নেন তারা। মঙ্গলবার নিয়ে টানা ১১ দিন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং দশম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যালয়ে যেতে পারছিলেন না উপাচার্য। তবে ছাত্রলীগের হামলার পর দুপুর ১টার দিকে পুলিশ, শাখা ছাত্রলীগ, প্রশাসনপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া পাহারায় নিজ গাড়িতে করে বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য। তাদের কড়া পাহারায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে নিজ কার্যালয়ে ৭-৮ মিনিট অবস্থান করেন তিনি। পরে সেখান থেকে নতুন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। উপাচার্য তাকে ‘মুক্ত’ করার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।