আদায়কৃত অর্থ বিনিয়োগে আয় হাজার কোটি টাকা

39

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের নিকট পাওনা প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। গত এক বছরে আদায়কৃত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
এদিকে কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণে বিভিন্ন বিপণন কোম্পানির (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এসএওসিএল) নিকট বিপিসির দীর্ঘ দিনের পাওনা গত ফেব্রুয়ারি মাসে আদায় বা সমন্বয় করা সম্ভব হয়েছে এবং সরকারের বিভিন্ন পাওনা (ভ্যাট/ট্যাক্স) পরিশোধও করা হয়েছে। বিমানের নিকট দীর্ঘ দিনের বকেয়া পাওনা আদায়েও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আর জ্বালানি তেলের মূল্য আদায়ে পেমেন্ট অটোমেশনাল কার্যক্রমের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্য আদায়ে পেমেন্ট অটোমেশনাল কার্যক্রম বাস্তাবায়িত হলে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় আর্থিক লেনদেনে অধিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জ্বালানি তেল পরিমাপ ও সরবরাহে প্রচলিত পদ্ধতির আধুনিকায়ণের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনাসহ দেশের সব ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম অটোমেশনাল প্রক্রিয়ায় করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দেশের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিপিসি’র হাজার কোটি টাকা আটকে রাখার সুযোগ থাকবে না বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোর। সঠিক সময়ে হিসাব জানার পাশাপাশি সরকারও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এর ফলে সঠিক পরিমাপ নিশ্চিতকরণসহ সিস্টেম লজ সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকবে বলে জানায় বিপিসি কর্তৃপক্ষ।
বিপিসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের নিকট পাওনা প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। গত এক বছরে আদায়কৃত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। ঢাকায় কারওয়ান বাজারের বিটিএমসি ভবনে সুসজ্জিত অফিস প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছরের সাফল্যেরই অংশ। আর সারাদেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ৩টি কোম্পানির (পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা) মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বর্তমানে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে কুতুবদিয়া হতে মাদার ভেসেলে (বড় জাহাজ) আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি লি. (ইআরএল) এ পরিবহনের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুড়িং (এসপিএম) প্রকল্প, চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন প্রকল্প, কুর্মিটোলা-কাঞ্চন ব্রিজ, রুপগঞ্জ পর্যন্ত জেট-এ-১ পাইপলাইন প্রকল্প, ইস্টার্ন রিফাইনারি লি. (ইআরএল) ২য় ইউনিট প্রকল্প এবং বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। গত ১ বছরে এসব প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং যথাসময়ে প্রকল্পসমূহের কাজ সম্পন্ন হবে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী বিপিসির অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিসমূহে প্রায় ৫০০০ জনবল থাকলে বর্তমানে প্রায় ৪,৫০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারি দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। যা বর্তমান সময়ে আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর বিপিসির কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে নিজস্ব জায়গায় নগরীর জামালখাঁন এলাকায় জয়পাহাড়ে ব্রিটিশ আমলের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি সংস্কার করে একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান জানান, বর্তমানে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার ৯টি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সবগুলো প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আর দেশের সব ডিপোর অপারেশনাল কার্যক্রম অটোমেশনাল প্রক্রিয়ায় করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার সম্ভ্যবতা যাচাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমদানিকৃত জ্বালানি তেল জাহাজ হতে খালাস, পরিবহন, ট্যাংকে রিসিভ, পরিমাপসহ যাবতীয় কাজে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে বিপিসি কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে জ্বালানি তেলের ভেজাল রোধ, পরিমাপ সঠিক রাখেতে দেশের সকল ফিলিং স্টেশন, ডিলার এর কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য বিপণন কোম্পানি, বিপিসি, বিএসটিআই, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশব্যাপী অভিযান জোরদার করা হয়েছে।