আদালতপাড়া এখন শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণায় সরগরম। আগামী ১০ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন হিসেবে পরিচিত জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। এবার অবশ্য চারটি নয়। দেড় দশক ধরে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা ভাবধারায় বিশ্বাসী আইনজীবীদের স্বতন্ত্র তিনটি প্যানেলের মনোনীত প্রার্থীরাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আবার সমমনা আইনজীবী সংসদ পূর্ণ প্যানেল দেয়নি। কয়েকটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। আর সবমিলিয়ে ১৯ পদের বিপরীতে এবার ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন ৪২ জন প্রার্থী।
সঙ্গতকারণেই প্রধান দুটি পদে অর্থাৎ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীকে ঘিরেই আলোচনা যেমন তুঙ্গে রয়েছে, তেমনি ভোটযুদ্ধেও এ দুই পদে হড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। এর মধ্যে সভাপতি পদে তিন প্যানেলের তিন জন প্রার্থী হলেও সাধারণ সম্পাদক পদে প্যানেলের বাইরে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। দেড় দশকের প্রথা ভেঙ্গে দু’বছর আগে পৃথক তিনটি প্যানেলের বাইরে ‘গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি’ নামে নতুন একটি প্যানেলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরপর দু’বছর ওই প্যানেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি পদে প্রার্থী করা হয়। তবে, বিজয়ী হতে পারে নি। এবার ওই প্যানেল থেকে প্রার্থী করা হয়নি। সাধারণ আইনজীবীরা বলছেন, সাদাচোখে প্যানেলভিত্তিক ভোট ভাগ করে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আগাম ধারণা করা নির্বাচন পর্যবেক্ষকসহ সাধারণ আইনজীবীদের কাছে তুলনামূলক সহজ হওয়ারই কথা। কিন্তু দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে প্রার্থীর ব্যাক্তিগত যোগাযোগ ও গ্রহযোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয়ও জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন অনেকে। এজলাসের বাইরে আইনজীবীদের মিলনায়তন থেকে চেম্বার সর্বত্র এখন আড্ডা বা আলোচনার প্রধান বিষয় নির্বাচন। ভোটারদের মধ্যে নানামুখী বিশ্লেষণ। ভোটারদের সমর্থন নিজের পক্ষে টানতে প্রার্থীরা কোনও চেষ্টাই আর বাকি রাখছেন না। ভোটারের সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীদের সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের আইনজীবী ঐক্য পরিষদ বরাবরের মত নয়টি সম্পাদকীয় ও দশটি নির্বাহী সদস্যপদের পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর স্বতন্ত্র ও দলনিরপেক্ষ ধারায় বিশ্বাসী সমমনা আইনজীবী সংসদ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকটি পদে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এর বাইরে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা অবশ্য নিজের বা প্যানেলের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এডভোকেট সুভাষ চন্দ্র লালা জানান, সোমবার সমিতির মিলনায়তনে সকাল নয়টা থেকে চারটা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্র জানিয়েছে,এবারের নির্বাচনে নির্বাচনে সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন সৈয়দ মোক্তার আহমেদ, ঐক্য পরিষদের মো. এনামুল হক ও সমমনার মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সমন্বয়ের তুষার সিংহ হাজারি ও ঐক্য পরিষদ থেকে শেখ মো. ছাবেদুর রহমানকে প্রার্থী করা হয়েছে। সহ-সভাপতি পদে ঐক্য পরিষদের মো. আজিজুল হক চৌধুরী এবং সমন্বয়ের আলী আশরাফ চৌধুরীকে প্রার্থী করা হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে যথারীতি তিন প্যানেলের প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে সমন্বয়ের আবুল হোসেন মো. জিয়াউদ্দিন, সমমনার তৌহিদুল মনির চৌধুরী এবং ঐক্য পরিষদের আব্দুর সাত্তার সারোয়ারকে প্রার্থী করা হয়েছে। একই পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মো. আবুল হাসান শাহাবুদ্দিন। এছাড়া, পাঠাগার সম্পাদক পদে প্যানেলের বাইরে হাবিব উল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাহী সদস্যের ১০টি পদে মোট ২০ জন প্রার্থী রয়েছে দুই প্যানেলের।