আত্ম উপলব্ধি ও আগামী নির্বাচন

125

বিজ্ঞ পাঠক আমি অনুরোধ করবো লিখাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করবেন। কেননা এটি বদলে দিতে পারে আপনার চিন্তার জগৎকে, আপনার জীবন ধারাকেও বদলে দিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। পরম করুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে প্রায় ৮৭ লক্ষ বৈচিত্র্যময় জীব সৃষ্টি করেছেন। তার সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। মানুষ এবং প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য প্রতিটি মানুষের ভিতর আছে একটি নিয়ন্ত্রক যে অন্যায় ও মন্দ কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখে, নীতি নৈতিকতা, ন্যায় ও ভালো কাজে উৎসাহ যোগায়, যাকে আমরা বিবেক হিসেবে অভিহিত করি, যা অন্য প্রাণীর মধ্যে নেই। বিবেক মানে বোধ শক্তি যার বিবেক সক্রীয় তাকে আমরা বোধ সম্পন্ন মানুষ বলি, যাদের বিবেক নিষ্ক্রিয় তাদের আমরা নির্বোধ মানুষ হিসেবে অভিহিত করি। সকল ধর্মের লোকেরাই বিশ্বাস করে পরকালে আমাদের পাপ পূণ্যের বিচার হবে, এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জান্নাত-জাহান্নাম, স্বর্গ-নরক নির্ধারিত হবে। শুধু মাত্র বোধ শক্তি থাকার কারণেই মানুষের বিচার হবে, অন্য কোন প্রাণীর নয়। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ দুইটি শিবিরে বিভক্ত একটি সত্য ও ন্যায়ের অন্যটি অসত্য ও অন্যায়কারীদের দল এবং কেয়ামত অবধি এই দুই শিবিরের লড়াই অব্যাহত থাকবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে স্তরে চলছে ভালো ও মন্দের এই সংঘাত, মুষ্ঠিমেয় মন্দলোকের জন্য সাজানো গুছানো এই পৃথিবীতে মানুষের জীবনে অশান্তি বিরাজ করছে। ভালো আর মন্দ কখনো এক হয় না, কিন্তু মন্দ আর মন্দ সহযেই এক হয়ে যায়. এই মুষ্ঠিমেয় মন্দ লোকেরা নিজেদের আত্মরক্ষার্তে সবসময় সংঘবদ্ধ থাকে। পক্ষান্তরে ভালো আর ভালো এক হয়ে যায় কিন্তু এরা সবসময় সংঘবদ্ধ থাকেনা। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বিরোধ শুরু থেকে আজ অবধি চলছে, এবং আগামীতেও এ বিরোধ অব্যাহত থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে ধরে নেয়া যায় এদের মধ্যে একদল ভালো এবং একদল মন্দ বা অশুভ শক্তি, তানাহলে অনেক আগেই এদের মধ্যে ঐক্য হয়ে যেত। প্রিয় পাঠক আবেগ দিয়ে নয়, বিবেক দিয়ে অনুধাবন করুন কে ভালো কে মন্দ। বিবেচনার সুবিধার্তে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো, ১৯৪৯ সালে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে শোষিত,মেহনতী ও গণ মানুষের ভাগ্যন্নোয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ নিয়ে, অপর দিকে ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও জাতীয় চার নেতাকে বিনা বিচারে জেলখানায় হত্যার পর ১৯৭৭এ স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জে.জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ১৯৭৮ সালে আওয়ামী বিরোধী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে বিএনপি গঠন করা হয়, যাদের মূল আদর্শ আওয়ামীলীগের বিরোধিতা, মিথ্যাচার ও অপঃপ্রচার এবং আওয়ামীলীগকে নির্মূল করা। স্বাভাবিক ভাবেই আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ৭১ এর গণহত্যাকারী, ৭৫ এর হত্যাকারী, ২০০৪ এর গ্রেনেড হত্যাকারী, জঙ্গি ও ২০১৪-১৫ তে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীরা এবং আদর্শচ্যুত ডিগবাজী খাওয়া রাজনীতিকরা। প্রিয় পাঠক আপনি যদি একজন সম্মানিত ভোটার হন তাহলে আপনার আবেগ নয় আপনার বিবেকের কাছে নিম্নের প্রশ্নগুলো রেখে গেলাম।
১. বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা প্রতিদিন গড়ে দেশের জন্য ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন যা অন্য কোন রাজনৈতিক নেতা করেন না। আপনি বিশ্বাস করেন কি এই মুহ‚র্তে তারমত প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী, দক্ষ, সৎ ও সাহসী নেতা বাংলাদেশে নেই ? সুতরাং আগামী ৫ বৎসর বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে তার কোন বিকল্প নেই।
২. বর্তমান সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীই সংসদ নেতা এবং সর্বময় ক্ষমতায় অধিকারী ঐক্যফ্রন্ট জিতলে কে হবেন বাংলাদেশের প্রথম ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ? অন্যদের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে উপনির্বাচনে জিতিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানানো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, এই সময়টায় যুক্তফ্রন্ট, জামায়াত সহ ২০ দলের লাগাম কার হাতে থাকবে?
৩. ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তেভেজা ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এই কষ্টার্জিত লাল-সবুজ পতাকা আমাদের কাছে পবিত্র আমানত,
এই পবিত্র আমানত কি কারো প্রতি রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধী জোটের গাড়িতে উড়িয়ে দিবেন ? আপনি কি কাল কিয়ামতের মাঠে ত্রিশ লক্ষ শহীদের জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত ?
৪. যারা বিনা-বিচারে নিরপরাধ শিশু রাসেল সহ তিনটি শিশু, গর্ভবতী আরজূ মণি, বেগম মুজিব সহ তার পূত্র বধূদের হত্যা, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার হত্যা- কারীদের যারা পুরস্কৃত করেছেন আশ্রয়-পশ্রয় দিয়েছেন এবং ক্ষমতায় বসে আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ করেছেন, এইসব হত্যাকারীর সহযোগীদের ভোট দিবেন ?
৫. যারা ২১ আগস্টের মত গ্রেনেড হামলা চালিয়ে নিরপরাধ ২৪ জনকে খুন আর শতাধিক ব্যক্তিকে আহত করেছেন তাদের ভোট দিবেন ?
৬. ক্ষমতার লোভে ২০১৪-১৫ সালে একটি দলের প্রধান নেতা টানা ৯০ দিন বাড়ি না ফিরে তার কার্যালয়ে বসে তার দিক্ নির্দেশনা ও পরিচালনায় প্রকাশ্য দিবালোকে শতশত ক্যামেরার সামনে নিষ্ঠুর উন্মত্ততায় নিরপরাধ দুইশত মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছেন, হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছেন, দেশে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছেন গণমাধ্যমের বদৌলতে সেই দৃশ্য দেশের ১৭ কোটি মানুষ অবলোকন করেছেন। এরপরও কি আপনি তাদেরকে ভোট দিবেন ?
৭. বিএনপির নেতারা প্রায়সই গুম খুনের অভিযোগ তোলেন (যদিও তার অনুক‚লে দালিলিক কোন প্রমাণ নেই) কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরা তেমন একটা অভিযোগ তোলেন কি ? কারণ পরবর্তীতে দেখা গেছে এদের অনেকেই ভারতের পথে পথে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেরাচ্ছেন বা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছেন, আবার অনেকে জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখিয়েছেন। এদের কথায় বিভ্রান্ত হওয়া কি ঠিক হবে?
৮. যাদের প্রচ্ছন্ন্ মদদে জঙ্গিরা এদেশের প্রগতিশীল, উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত বিদেশী ও আওয়ামী ঘরণার কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের হত্যা করেছে, আপনি তাদের ভোট দিবেন ?
৯. বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য জঙ্গি উগ্রবাদী, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও স্বাধীনতা বিরোধী ও এর দোসররা কতবার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ? পক্ষান্তরে বিএনপি নেত্রীকে হত্যার প্রচেষ্টা কতবার হয়েছে ? একবারও হয়নি, কারণ এদেশে তারাই হত্যা- কারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা।
১০. আপনি কি বিশ্বাস করেন ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় ? মৃত্যুর মধ্যদিয়ে ব্যক্তির অবসান ঘটে, নীতিহীন রাজনীতির কারণে দলেরও পতন হয়, কিন্তু দেশের স্থায়িত্বকাল দীর্ঘ। আপনি কি বিশ্বাস করেন দেশের উন্নয়নের বিপক্ষে নিজের ব্যক্তি স্বার্থে কাউকে ভোট দেওয়া উচিৎ নয়?
১১. আগের সরকারের সময় দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডসেডিং হতো রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারতেন না, প্রতিদিন গোসল করতে পারতেন না, এখন প্রতিদিন ফেন,এসি ছেড়ে রাতে অন্তত শান্তিতে ঘুমাতে পারেন, নিয়মিত গোসল করেতে পারেন, এই দূরহ কাজটি যারা করেছেন শুধু এজন্যই তাদের ভোট দেয়া উচিত তা নয় কি?
১২.এই সরকারের আমলে কি আপনার জীবনমানের উন্নতি হয়েছে ? আপনি কি বিনা- মূল্যে বই পেয়েছেন? আপনি কি একজন সুবিধাভোগী? এই সরকার গত দশ বৎসরে দৃশ্যমান দেশের যে ব্যাপক উন্ন্য়ন করেছেন, স্বাধীনতা উত্তর কোন সরকার তা করতে পারেনি। তারপরও যদি ভোট না পান, তাহলে ভবিষ্যতে আর কোন সরকার দেশের উন্ন্য়নে মনোযোগী হবেন কি? সুতরাং আপনি যদি এই সরকারের বিপক্ষে ভোট দেন তবে তা হবে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিপক্ষে তা নয় কি ?
১৩.গণতন্ত্র কি শুধু স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে সাংসদ নির্বাচিত করা, কাউকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানো, যা খুশি তাই বলার অধিকার ? নাকি রাষ্ট্রকর্র্তৃক অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ গণমানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবধিকার গুলো নিশ্চিত করা?
১৪. এই সরকার বড় বড় অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিয়েছেন আইনের স্বাশন অনেকটাই বাস্তবায়িত করেছেন। কিন্তু যদি যুদ্ধাপরাধীর দলকে নিয়ে বিরোধি জোট ক্ষমতায় আসে তবে যুদ্ধাপরাধীর উত্তরসূরিরা দেশে ব্যাপক হত্যাকান্ড ও ধংসলীলা চালাবে, এতে কোন সন্দেহ নেই, তখন এই হত্যার দায়ভার পরোক্ষ ভাবে আপনার উপরও বর্তায় তা নয় কি?
পরিশেষে বলতে চাই ”যে অন্যায় করে, যে অন্যায় সহে, যে অন্যায়কারীকে সমর্থন করে উভয়েই সমান অপরাধী”,অন্যের দায় নিজের কাঁধেনেয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ? ইসলামে নিরীহ মানুষ হত্যা হারাম ও মহাপাপ আল্লাহ বলেন, ”যে ব্যক্তি একজন মানুষকে হত্যা করলো সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো”। (সুরা মায়েদা ৩২), অতএব আপনার মূল্যবার ভোটটি যাকে খুশি তাকে নয়, জেনে বুঝে ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের চলমান উন্নয়নে আপনিও একজন গর্বিত অংশীদার হউন।
লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক