আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মাঝেও থেমে নেই ইয়াবার আগ্রাসন

104

মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মাঝেও থেমে নেই ইয়াবার কারবার। ফলে প্রতিদিনই সংঘটিত হচ্ছে কথিত বন্দুকযুদ্ধের। ইয়াবা ব্যবসার ঊর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি এলাকায় বিস্তার করেছে ইয়াবা ব্যবসা। এলাকার এক শ্রেণির মুখোশধারী জনপ্রতিনিধিও রাজিৈনতক ব্যক্তিদের হাত ধরে মরণব্যাধি এ মাদকের বিস্তার ঘটেছে সর্বত্রে। এই মাদক আগ্রাসন থেকে বাঁচতে একটি পক্ষ আত্মসমর্পণে সম্মত হলেও বেশিরভাগ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করতে রাজি নন। গত রবিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী নয়াবাজার এলাকায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে মৃত্যু হয় দুই মাদক ব্যবসায়ির। এপ্রসঙ্গে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ জানান, রাতে একদল মাদক ব্যবসায়ির অবস্থানের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযানে যায়। সেখানে পৌঁছতেই পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়িরা গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে এই দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। তারা হচ্ছে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ঝিমংখালী এলাকার ফরিদ আলমের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৫), একই ইউনিয়নের মিনা বাজার এলাকার সফর আলীর ছেলে মো. রফিক আহাম্মদ (৩০)। এসময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে মৃতদেহগুলো ময়না তদন্ত রিপোর্ট তৈরির জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। নিহতদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তৈরিকৃত তালিকা অনুযায়ী জেলার ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছেন তারা। তালিকার প্রায় সহস্রাধিক ব্যবসায়ী সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়া-টেকনাফের। গত বছরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে এই ইয়াবা ব্যবসায়িদের বড় একটি অংশ আত্মগোপনে। মাঝেমধ্যে দু-একজন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। বিশেষত যারা গডফাদার, যারা ইয়াবার বড় ব্যবসায়ী তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে বহাল তবিয়তে। আর চুনোপুঁটিরা হয়তো মারা পড়ছে আর নয়তো জেলে যাচ্ছে- এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের। সীমান্ত এলাকার লোকজনের দাবি- বন্দুকযুদ্ধে যে সমস্ত ইয়াবা ব্যবাসায়ী নিহত হচ্ছে তারা আসলে চুনোপুঁটি। তাদের গডফাদাররা বরাবরের মতোই থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে প্রশাসনের এতো অভিযানের মাঝেও থেমে নেই ইয়াবার আগ্রাসন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আত্মসমর্পণের প্রথম ধাপে তারা টেকনাফ কেন্দ্রিক ইয়াবা কারবারিদের নজরে রাখছেন। কারণ টেকনাফ হলো ইয়াবার ‘সদর দরজা’। সেখানকার কারবারিরা আত্মসমর্পণ করলে ইয়াবার কেনাবেচা কমবে। এটা দেশের অন্য এলাকার ইয়াবা কারবারিদের জন্য একটা সতর্ক বার্তা হিসেবে কাজে দেবে।
অন্যদিকে আত্মসমর্পণের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসার সংখ্যা কমছে বলে জানান পুলিশ-র‌্যাবের কর্মকর্তারা। তবে এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন উখিয়ার সাধারণ মানুষেরা। তাদের মতে, উখিয়ার মাদক আগ্রাসন এখনো বন্ধ হয়নি। শুরু থেকে বিভিন্নভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নাম উচ্চারণ হয়ে আসলেও তাদের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনা। তারা ইয়াবা’র অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পেয়েছেন বলে প্রশ্ন রাখেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে বিদেশে পলাতক অনেক ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করতে দেশে ফিরেছেন। ভারত, মিয়ানমার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে পলাতক ইয়াবা কারবারিরা দেশে ফেরত এসে পুলিশ হেফাজতে এসেছেন। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশ হেফাজতে গেছেন অনেকে। আত্মসমর্পণের জন্য বাড়ি ছাড়ার আগে কোনো কোনো ইয়াবা কারবারিকে তাদের পরিবারের সদস্যরা ‘আয়োজন’ করে ‘বিদায়’ জানান।