আত্মসমর্পণ করছেন আরও অর্ধশত ইয়াবা ব্যবসায়ী

70

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফের তালিকাভুক্ত প্রায় অর্ধশত ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করছেন। তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি সকালে ‘সেফহোম’ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে হবে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান।
এতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে (২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি) টেকনাফের শীর্ষ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদির চার ভাইও ছিলেন। এসময় সাড়ে তিন লাখ পিস ইয়াবা, দেশি ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭০ রাউন্ড গুলি প্রতীকীভাবে সমর্পণ করেন তারা। এই ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন কারাগারে মারা যান। বাকি ১০১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযুক্তপত্র দাখিল করে পুলিশ। এসব তথ্য নিশ্চিত করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানিয়েছেন, ‘দ্বিতীয় দফায় চলতি মাসে ২৯ জানুয়ারি ৪০-৫০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এতে আমন্ত্রণ জানানো হবে’। এএসপি আরও বলেন, ‘ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হলেও নিয়মিত অভিযানে কোনো ধরনের শিথিলতা থাকবে না। আত্মসমর্পণের আওতায় না এসে কারবারিরা কৌশলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’। যেকোনো মূল্যে ইয়াবা কারবার বন্ধ করবে সরকার- এই বার্তা দিতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী’।
আত্মসমর্পণকারী এক মাদক ব্যবসায়ির পরিবার জানায়, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রতিদিনই ইয়াবা ব্যবসায়িদের কেউ না কেউ নিহত হচ্ছে। তাই ভয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে’।
আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করানোর ব্যাপারে গত পাঁচ মাস ধরে কাজ করছি। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে প্রয়োজনীয় সম্মতি পাওয়ার পর স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইচ্ছুক ইয়াবা কারবারিদের তালিকা তৈরি হয়।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফে ইয়াবারোধে কড়াকড়ি জারি থাকায় মাদক কারবারিরা রুট পরিবর্তন করছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কমেছে ইয়াবা ব্যবসা। কিন্তু এখন নতুন করে সক্রিয় হয়েছে মিয়ানমারের নাগরিকরা। তারা এখন মিয়ানমার থেকে সরাসরি সমুদ্র পথে ও অন্যান্য রুটে ইয়াবা কক্সবাজার, মহেশখালী, চট্টগ্রাম, পতেঙ্গা, আনোয়ারা, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছায়। এর সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। এছাড়া সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা। ফলে প্রতিনিয়িত ইয়াবাসহ ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া মাদক বিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হচ্ছে মাদক কারবারি রোহিঙ্গারাও।
চলতি মাসে জানুয়ারি মাসের ২৩ দিনে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৭ মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন রোহিঙ্গাও রয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান এ বিশেষ অভিযানে গিয়ে ইয়াবা কারবারি, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ৫৬ রোহিঙ্গাসহ ২০৯ জন ইয়াবা কারবারি ও ডাকাত-সন্ত্রাসী নিহত হয়। পাশপাশি গত এক বছরে ১ কোটি ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭০ পিস ইয়াবাসহ ২ হাজার ৩৩৮ জনকে আটক এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছিল আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান থাকায় ইয়াবা ব্যবসা অনেকটাই কমে এসেছে। যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে। তবে একই সাথে মাদকের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, না হলে পুরোপুরিভাবে মাদক বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে’।