আতংক নয়, সতর্ক থাকুন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

149

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ‘আতঙ্কিত নয়, সতর্ক থাকুন। সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে, ভয়ের কোনও কারণ নাই। আশা করি করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আসবে না।’ গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এসব কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য মন্ত্রণালায়ের প্রতিনিধিরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ধরনের প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছি। একটি হচ্ছে- ভাইরাসটি যেনো কোনোভাবেই দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে; সেজন্য সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে আমরা মনিটরিং করছি, স্ক্যানার বসিয়েছি, হ্যান্ড স্ক্যানারও সরবরাহ করেছি। বিমানবন্দরের প্রতি নজর রাখছি বেশি। সিভিল অ্যাভিয়েশন ডিপার্টটমেন্ট আমাদের সার্বক্ষণিক সবধরনের সহযোগিতা করছে। চীন থেকে যারা আসছেন, তাদের নজরদরিতে রাখা হচ্ছে। ১৪ দিন পর্যন্ত এই পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে। কারণ, ভাইরাসটি আক্রমণ করলে উপসর্গ দেখা দেয় ১৪ দিন পর। দ্বিতীয়ত; করোনা ভাইরাস বহনকারী কেউ যদি দেশে প্রবেশ করেই ফেলে, সেটি ঠেকাতে কুর্মিটোলা হাসপাতাল এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড খুলেছি। কোনও রোগী শনাক্ত হলে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতি জেলায় সিভিল সার্জন, ডিসি এবং এসপিকে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, কুর্মিটোলায় দ্ইুশ’ চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ডাব্লিউএইচও-এর গাইড লাইন অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশের সব হাসপাতালে এই গাইড লাইন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘চীনের উহান রাজ্যে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে। ইতোমধ্যে দেশটির একশ’ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার। এই ভাইরাস পশু থেকে মানুষের দেহে আসে এবং ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, ইঁদুর-বাঁদুর থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। ভারইরাসটি খুবই সংক্রামক। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়।’
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ আক্রান্ত হলে বেশি মাত্রায় জ্বর হবে, কাশি হবে। এগুলো দেখা দিলেই যেনো কেউ হাসপাতালে যোগাযোগ করে। তবে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ধরনের কোনও রোগী আমরা পাইনি।’ মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশিদের চীন ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন,‘চীনের উহানে বাংলাদেশের তিনশ’ ছাত্র আছে। সেখানে কেউ এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- তারা যদি আসতে চায়, তাদের যেনো নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চীন সরকার কাউকে দেশত্যাগে অনুমতি দিচ্ছে না। ১৪ দিন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাউকেই দেশত্যাগে অনুমতি দেবে না। এই ১৪ দিনের বাধ্যবাধকতা শেষ হবে ৬ ফেব্রূয়ারি। এই মুহূর্তে চীনে যাতায়াত না করার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে কোনও ‘ট্রাভেল ব্যানড’ নাই। ডাব্লিউএইচও কোনও নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকরা নজরদারি : বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন। তারা যেখানে থাকেন, সেখানে নজরদারি করা হচ্ছে। তবে বেশি নজরদারি রাখছি বিমানবন্দরে। এই সময় যারা চীন থেকে বাংলাদেশে আসছেন, তাদেরও ১৪ দিন মনিটরিং করবো।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, রাজধানীর একটি বেসরকরি হাসপাতালে একজন চীনা নাগরিক সর্দি নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে চাচ্ছেন। তবে আমরা তাকে যেতে দিচ্ছি না। তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
এসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রতিনিধি জানান, গত ১৫ দিনে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে মোট ২৮০৫ জন লোক চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এই কয়দিনে ৭৫৭০ জন নাগরিক নিজ দেশে গিয়েছেন, তারা ১৫ দিন পর ফিরে আসবেন।
শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক জানান, বিমানবন্দরে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।