আজ শুভ মহালয়া

15

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাত পোহালেই শুভ মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা। মা আসছেন মর্ত্যলোকে, এ ধরণীতে। আনন্দময়ীর শুভাগমনে সকল দুঃখ-দুর্দশা কাটিয়ে এবার দেখা মিলবে আনন্দ-আলোর। তাই আশ্বিনের এই শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। ধরাধামে মাতৃ-বন্দনায় বেজে উঠবে শঙ্খধ্বনি। ভোরের ঊষালগ্নে চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়েই শুরু হবে দেবীর আবাহন। গীত হবে- ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’…
শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই চন্ডীতেই আছে আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। শারদীয় দুর্গাপূজার অন্যতম গুরুত্বপর্ণ একটি অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। পুরাণমতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এদিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয় । মহালয়া মানেই মায়ের পূজার প্রতীক্ষা। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।
মহিষাসুরমর্দিনী দশভ‚জা দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীকরূপে মর্ত্যলোকে পূজিত হন। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। দেবাদিদেব শিবের বর অনুযায়ী, কোনও মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে বধ বা হত্যা করতে পারবে না। ফলত মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। মহালয়ার আরেকটি দিক হচ্ছে, এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরুষকে স্মরণ ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্মমতে, এই দিনে প্রয়াতদের আত্মা মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াতদের আত্মার এই সমাবেশকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। তাই পিতৃপক্ষেরও এটি শেষদিন।

মেধস আশ্রমে মহালয়া’র আয়োজন ঃ দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন তিথি শুভ মহালয়া উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা পাহাড়ের আদি চন্ডীতীর্থ মেধস আশ্রমে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখা। শুভ মহালয়ার অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে মেধস আশ্রমে সকাল আটটায় শ্রীশ্রী চন্ডীপূজা, সকাল সাড়ে আটটায় চন্ডীপাঠ ও আলেখ্য অনুষ্ঠান, সাড়ে ন’টায় মাতৃ-আহবান সংগীতানুষ্ঠান, সকাল ১১টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মধ্য দিয়ে শুভ উদ্বোধন, সাড়ে ১১টায় পুষ্পাঞ্জলী প্রদান, দুপুর ১২টায় মহালয়াভিত্তিক আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন যথাক্রমে জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ্, বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মামুন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল শর্মা ও উত্তম কুমার শর্মা, আলোচক থাকবেন অধ্যাপক সচ্চিদানন্দ রায় চৌধুরী ও অধ্যাপক নারায়ণ চৌধুরী। উদ্বোধন করবেন পাঁচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী রবীশ^রানন্দ পুরী মহারাজ এবং আশির্বাদ কববেন বুলবুল মহারাজ। সকাল সাতটায় আন্দরকিল্লা মোড় থেকে পূজার্থীদেরকে নিয়ে বাস শোভাযাত্রা মেধস আশ্রমের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। পুষ্পাঞ্জলি প্রদান শেষে উপস্থিত পূজার্থীদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব শুভ মহালয়ার অনুষ্ঠানমালায় সকলকে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

জেএম সেন হলে মহানগর পূজা পরিষদের আয়োজন ঃ পূজা উদযাপন পরিষদ মহানগর শাখার উদ্যোগে শারদীয়া দুর্গাপূজার উদ্বোধনী পর্ব দেবীপক্ষের শুভ মহালয়া উদযাপনে আজ রবিবার দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী জেএম সেন হলে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ন’টায় মহালয়া পূজা, বিকাল তিনটায় শ্রীশ্রী চন্ডীপাঠ, চারটায় জাতীয় ও পূজা পরিষদের পতাকা উত্তোলন এবং মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন, সন্ধ্যা ছ’টায় ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- ‘আগমনী’, সাতটায় আলোচনা সভা, রাত আটটায় গীতি নৃত্যনাট্য ‘মা চন্ডী’। আলোচনা সভায় উদ্বোধক থাকবেন কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য। প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। প্রধান বক্তা থাকবেন দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। বিশেষ অতিথি থাকবেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টী উত্তম কুমার শর্মা, প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল অনুষ্ঠানমালায় সকলের উপস্থিতি কামনা করেছেন।