আজ মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা

55

মহাসমারোহে চলছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। পূজার দ্বিতীয় দিনে গতকাল শনিবার মহাসপ্তমীতে মন্ডপে মন্ডপে ছিল দর্শনার্থীদের ঢল। আজ মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, গতকাল শনিবার সপ্তমীর দিন সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে পূজামন্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানের প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুপুর ২টা ৩৭ মিনিটের মধ্যে পূজা শেষে দেওয়া হয় পুষ্পাঞ্জলি।
সপ্তমী তিথিতে শনিবার মÐপে নবপত্রিকা বা কলাবউ এর পূজা করা হয়। এ উপলক্ষে পূজা বেদীর পাশে সাজানো হয় কলাবউ।
শাস্ত্র অনুযায়ী, ৯টি উদ্ভিদ, কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়ম্বি , অশোক, মান ও ধান সমূল সপত্র একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর লাল পাড়ের সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়।
শারদীয় দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমিতে দর্শনার্থীদের ঢল নামে মন্ডপগুলোতে। সব মÐপেই ছিল উপচে পড়া ভিড়।
দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মন্ডপগুলোতে ছিল পূজার আয়োজন। সবাই পূজা ও অঞ্জলি নিয়েই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু বিকাল থেকেই নেমে পড়ে পূজা দর্শনে। সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় আরো বাড়তে থাকে।
জেএমসেন হল, হাজারী লেন, পাথরঘাটা, নালাপাড়া, খাতুনগঞ্জ, ঘাটফরহাদবেগ, জামালখান, চেরাগি মাড় এলাকার মন্ডপগুলো পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিটি মন্ডপেই ভক্ত-দর্শনার্থীর ভিড়। সে ভিড় চোখে পড়ার মত। নারী-পুরুষ-শিশুসহ সব বয়সি মানুষেরই ভিড় দেখা গেছে। সবাই ঘর থেকে বের হয়ে পড়েছেন পূজা দর্শনে। পরিবারের সকলে বের হয়েছেন পূজায়। এক মন্ডপ থেকে আরেক মন্ডপে ঘুরে ঘুরে দর্শন করেছেন প্রতিমা। লাইন ধরে প্রবেশ করেছেন মন্ডপে। নারী-পুরুষের ছিল আলাদা লাইন। পূজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিটি মন্ডপে।
পুরো নগরজুড়ে অসংখ্য নারী-পুরুষ পায়ে হেঁটে পূজা দর্শন করেছেন। এক মন্ডপ থেকে আরেক মন্ডপে গেছেন তারা। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় আরতি। কোন কোন মন্ডপে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলে। নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রে মুখরিত হয়ে উঠে এলাকা। পূজাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মেলায়ও ভিড় করেন দশনার্থীরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সংসদ সদস্যরাও নগরীর বিভিন্ন মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। এতে মন্ডপগুলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসবের মেলায় রূপ নেয়।
এবার পূজায় রয়েছে থিমের ছড়াছড়ি। কোথাও মন্ডপে, কোথাও প্রতিমায়, আবার কোথাও আলোর ঝলকানিতে মাত করার চেষ্টা। হাজারী লেইন পূজামন্ডপে এবারের থিম- ‘এ জগত এ আমার মা’, পাথরঘাটা মনোহরখালী পূজামন্ডপের থিম ‘অন্যায়, অত্যাচার প্রতিরোধ’, জয়নাব কলোনী বৃন্দাবন আঁখেড়ায় ‘ধর্ষণ রোধে সচেতনতা’, গোসাইলডাঙ্গা একতা গোষ্ঠীর দুর্গাপূজার থিম ‘জাগ্রত হোক মানবতাবোধ’ এবং টেরিবাজার আফিমের গলি মন্ডপের থিম ‘স্মৃতির ডানা’।
আজ মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পাথরঘাটা শান্তনেশ্বরী মÐপে প্রতিবারের মত এবারও কুমারী পূজার আায়োজন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কুমারী পূজার প্রচলন করেন ধমপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ। ১৯০১ সালে তিনি কলকাতার বেলুড় মঠে কুমারী পূজার প্রচলন করেন। তখন থেকে দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজা করা হচ্ছে। পূজার আগে কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন, আচার-অনুষ্ঠান করতে পারেন। সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়।