আজ পবিত্র শবে বরাত

92

আজ বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দেশের মুসলমান সম্প্রদায় দিবসটি পালন করে থাকেন। তবে এবার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ঘরে ইবাদত করার আহব্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
অন্যান্য বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন মাগরিবের নামাজের পর থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মিলাদ ও জিকির আসগারসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করলেও এবার এ ধরনের কোনও আয়োজন করা হচ্ছে না।
শবে বরাত মুসলামানদের কাছে লাইলাতুল বারাআত নামেও পরিচিত। আরবি শব্দ লাইলা অর্থ রাত, অন্যদিকে ফার্সি শব্দ শব অর্থও রাত, আর বরাত অর্থ মুক্তি বা নিষ্কৃতি। শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ রাতকে মুক্তির রাত বা নাজাতের রাত হিসেবে অবহিত করা হয়। এ রাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এ রাতে অনেকেই নফল নামাজ, কোরআন তেলওয়াত ও দোয়া করে থাকেন। এছাড়া অনেকেই এ রাতে বাবা-মাসহ আত্মীয়দের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের

২৫ মার্চ বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হয়। ২৭ মার্চ (শুক্রবার) থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা শুরু হয়।
শুধু শবে বরাতই নয়, অন্যান্য সময়েও মুসল্লিদের ঘরে বসে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা জরুরি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। গত সোমবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাখাওয়াৎ হোসেন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সব ধর্মের মূলনীতির আলোকে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এ নির্দেশনা জারি করা হলো এবং এ নির্দেশনা অমান্য করলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
শবে বরাতে কবরস্থানে জনসমাগম না করার আহব্বান : করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে শবে বরাতের রাতে বিশেষ দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গে কবরস্থান বা মাজারে জনসমাগম না করার জন্য দেশের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতি আহব্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দিনগত রাতে সারাদেশে শবে বরাত পালিত হবে। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখে দিনগত রাতটিকে মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করেন।
অনেকের মতে, মহিমান্বিত এ রাতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মুসলমানরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বিশ্বে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে।
‘বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে মহিমান্বিত এ রজনীতে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগির সময় ব্যক্তিগত দোয়া ও প্রার্থনা ছাড়াও করোনা ভাইরাসের মহামারির আক্রমণ থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখার বিষয়ে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করার জন্য দেশের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহব্বান জানানো যাচ্ছে।’
দেশের শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, মসজিদের সম্মানিত খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকসহ সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে এই দোয়া ও প্রার্থনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায় ইতোপূর্বে লক্ষ্য করা গেছে যে, শবে বরাতে জিয়ারতের জন্য কবরস্থান ও মাজারে অনেক লোকের সমাগম হয়। এছাড়া কবরস্থান ও মাজারের ভিতরে-বাইরে অনেক ভিক্ষুক, অসহায়, অসচ্ছল, প্রতিবন্ধী ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সাহায্যের জন্য সমবেত হন। এ ধরনের জনসমাগমের কারণে করোনা ভাইরাস ব্যাপক হারে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমতাবস্থায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শবে বরাতে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে না গিয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে মৃত আত্মীয়-স্বজনের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আহব্বান জানানো হয়।
একই সঙ্গে কবরস্থান ও মাজারের গেট বন্ধ রাখাসহ কবরস্থানের ভিতর ও বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম না করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনুরোধ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে গুজব ছড়ানো ও গুজবে বিশ্বাস থেকে বিরত থাকার জন্যও সবাইকে অনুরোধ করেছে।