আজ নাজিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস হাটহাজারী প্রতিনিধি

103

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এ বাংলার মাঠ-ঘাট, এ স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা মানে বিশ্বের মানচিত্রে এক লাল সবুজের পতাকা। যে পতাকাকে পেতে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা দিয়েছে দেহের তরতাজা প্রাণ। যুদ্ধ করেছে লাখ লাখ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি এ বাংলার স্বাধীনতা। একাত্তরের রণাঙ্গনে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনলেও হাটহাজারী হানাদারমুক্ত হয়েছিল আজকের এ দিনে।
আজ সোমবার ৯ ডিসেম্বর, নাজিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে উত্তর চট্টগ্রামের রণাঙ্গন হাটহাজারীর নাজিরহাটে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। আর এ দিন ভোরে এই দেশের বাংলা মায়ের দামাল ছেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে টিক থাকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটেছিল। পাক হানাদার বাহিনী চলে যাওয়ার পর মুক্তিকামী ছাত্র জনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছিল। দিনভর হাটহাজারীর ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফটিকছড়ি বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানেরা চাঁদের গাড়িতে করে কামান এবং অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেশের মানচিত্র অংকিত পতাকা নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে নাজিরহাটে সমবেত হয়। ওই দিন চলেছিল বিজয়ের ‘বিজয় উৎসব’।
এদিকে গোপন সংবাদ পেয়ে পলাতক পাক হানাদার বাহিনী সন্ধ্যায় হাটহাজারী পৌরসভাস্থ অদুদিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে ৩/৪টি বাসে করে নাজিরহাটে আসে। তারা উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনতার উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনী সাথে মুক্তি বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার নায়েক তফাজ্জল হোসেন (বরিশাল), সিপাহী নুরুল হুদা (কুমিল্লা), সিপাহী অলি আহম্মদ (খুলনা), সিপাহী নুরুল ইসলাম (স›দ্বীপ), সিপাহী মানিক মিয়া (চট্টগ্রাম), ফোরক আহম্মদ (নাজিরহাট), হাসিনা খাতুন (নাজিরহাট), আবদুল মিয়া (নাজিরহাট), নুরুল আবছার (কুমিল্লা), মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক (ফরহাদাবাদ) ও অজ্ঞাতনামা একজনসহ ১১জন শহীদ হন।
এরপর পাক হানাদার বাহিনী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাজিরহাট, ফটিকছড়ি এবং হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, নাজিরহাট হালদা নদীর সেতু ধ্বংস, হত্যাযজ্ঞসহ নারকীয় তাণ্ডব চালায়। পাক বাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে শহীদ ১১জনকে নাজিরহাট বাসস্টেশনে সমাহিত করা হয়েছে। প্রত্যেক বছর এ দিনে নাজিরহাট মুক্ত দিবসে হাটহাজারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, উপজেলা আওয়ামী লীগসহ হাটহাজারী, ফটিকছড়ির মুক্তিযোদ্ধারা শহীদের কবরে পুষ্প অর্ঘ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে।
তাছাড়া প্রত্যেক জাতীয় দিবসে ও ১১ জনের কবরে প্রশাসনসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এখানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দীর্ঘদিন ১১জন শহীদের এ কবর অবহেলিত থাকার পর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলে শহীদের কবরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে।