আজ চৈত্র সংক্রান্তি

82

আজ চৈত্র সংক্রান্তি। চৈত্রের শেষ দিন। বাংলার আকাশে আজ বঙ্গাব্দ ১৪২৬ এর শেষ সূর্যোদয়। একইভাবে আজকের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়েই বিদায় নেবে আরো একটি বাংলা বছর। অতীত বছরের সব জরা, জীর্ণ আর মলিনতাকে বিদায় জানাবে বাঙালি।
বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন : ‘অতীত নিশি গেছে চলে/চিরবিদায় বার্তা বলে,/ কোন আঁধারের গভীর তলে/রেখে স্মৃতিলেখা,/এসো এসো ওগো নবীন,/চলে গেছে জীর্ণ মলিন-/আজকে তুমি মৃত্যুবিহীন/ মুক্ত সীমারেখা।’ কথাগুলো আজ মনের অজান্তেই ভেসে উঠবে কোটি কোটি প্রাণে।
তবে অন্যান্যবার দিনটি মহাসমারোহে পালন করা হলেও করোনা আতঙ্কে এবার পালিত হবে ভিন্নরূপে। কোন আনন্দ ছাড়া। সিএমপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, কোন ধরনের অনুষ্ঠান বা জনসমাগম করা যাবে না।
বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা মহামারী। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৩৪ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৬২১ জন। অঘোষিত লকডাউন চলছে দেশজুড়ে। ঘর থেকে লোকজনের বের হওয়া নিষেধ।
চৈত্র সংক্রান্তিতে দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। পাড়ায় পাড়ায় নানা রকম খেলার আয়োজন করা হত। কোন কোন এলাকায় মেলাও বসত, সেখানে মিলিত হত হাজারো মানুষ। হরেক রকম অনুষ্ঠানমালা থাকত। কিন্তু এবার এর কিছুই নাই। করোনা ভাইরাস সবকিছু ম্লান করে দিয়েছে। মানুষকে করেছে ঘরবন্দি। এবার কারো মনে আনন্দ নেই, অনেকের ঘরে খাবারও নেই। সাহায্যের অপেক্ষায় হাজারো পরিবার।
চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ঘর সাজানো হত, পুরাতন সমস্ত কিছু ধুয়ে মুছে ফেলা হত। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ছিল কতই না আনন্দ। বিশেষ করে গ্রামে আনন্দ করত সবাই মিলে। এবার সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। লোকজনকে ঘরে বসে অনুষ্ঠান করতে বলা হয়েছে, কোন ধরনের জনসমাগম করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, শত শত বছর ধরে চলে আসা চৈত্র সংক্রান্তির কোন আনন্দ উল্লাস এবার নেই। গ্রাম থেকে খবর নিয়ে জানা গেছে, কোন এলাকায় এবার কোন ধরনের অনুষ্ঠানাদি নাই। অন্যান্য বছর হিন্দু স¤প্রদায় ঘরের দরজায় নিমপাতা, ফুল দিলেও এবার তাও হচ্ছে না। কারণ বাজারে এসব বিক্রি হচ্ছে না, আবার লোকজন বেরও হচ্ছে না।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোন বাজারেই পূজা বা অনুষ্ঠানাদির উপকরণ বিকিকিনি হচ্ছে না। দু-একজন কিছু জিনিসপত্র আনলেও ক্রেতা নেই।
পুলিশ বলছে, জনসমাগম হয় এমন কোন অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ গতকাল রবিবার পূর্বদেশকে বলেছেন, জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, জনসমাগম হয় এ ধরনের কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না। পুলিশ মাঠে রয়েছে। কেউ জনসমাগম করতে চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, করোনা ঠেকাতে সকলকে ঘরে থাকতে হবে। জনসমাগম হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
দেখা যায়, নগরীর কোথাও চৈত্র সংক্রান্তি পালনের কোন তোড়জোর নেই। নেই কোন আনন্দ।