আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল পবিত্র ঈদুল ফিতর

240

ঈদ আসে আনন্দের বার্তা ও সাম্যের গান নিয়ে। মুসলিম মিল্লাতের ঘরে ঘরে ঈদ উৎসব ঘিরে চলছে আনন্দ আয়োজন। ঈদের দিন ধনী-গরিব, দুস্থ-দুশমন কোন ভেদাভেদ থাকে না। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাই এক কাতারে চলে আসেন। ঈদ ঘিরে ঘরে ঘরে বেজে উঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত সেই গান- ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ…/ আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন, হাত মেলাও হাতে,/ তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।/ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
এক মাস সিয়াম-সাধনা শেষে খুশির সওগাত নিয়ে আসছে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। আজ মঙ্গলবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল বুধবার উদ্যাপিত হবে ঈদ উৎসব। সে ক্ষেত্রে রোজা হবে ২৯টি। আর চান্দ্রমাস পূর্ণ হলে অর্থাৎ বুধবার চাঁদ দেখা গেলে ঈদ উৎসব হবে বৃহস্পতিবার। সে ক্ষেত্রে রোজা হবে ৩০টি। এখন শুধু নতুন চাঁদের অপেক্ষা।
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চাঁদ দেখে রোজা পালন করবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। তিনি বলেছেন, চান্দ্র মাস ২৯ দিনেও হয়, আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকে, এতে চাঁদ দেখা না যায়, তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে।
ঈদুল ফিতর মুসলিম জাহানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের জন্য অপেক্ষার ক্ষণও অনেক মধুর। পবিত্র এ উৎসব উদ্যাপনে এখন সারাদেশেই সাজ সাজ রব।
ইতোমধ্যে নানা ঝক্কি-ঝামেলা মাথায় নিয়ে হলেও প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপনে গ্রামের বাড়ি পৌঁছেছেন নগরে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন এ দেশের আবহমান ঐতিহ্যেরও অংশ। ধর্মীয় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পরিবারের সব সদস্যের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ ও মিলিত হওয়ার সুযোগ আসে। এতে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়।
এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদকে মুসলমানদের প্রধান উৎসব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে। আর এটি হচ্ছে (ঈদুল ফিতর) আমাদের উৎসব’। সিয়াম-সাধনার কষ্টের পর মানব মনের সজীবতা ও কোমলতা অটুট থাকার মাধ্যম হচ্ছে এ ঈদ। তাই রমজানের রোজা শেষে খুশির উৎসব ঈদুল ফিতর।
ধনী-গরীব, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী থেকে প্রবীণ- সবার মন এখন ঈদের আগমনী বার্তায় আন্দোলিত, আবেগে উচ্ছ¡সিত। আর্থিক অসঙ্গতি, পাওয়া না পাওয়ার ব্যবধান, ঘরে ফেরার পথে নানা বিড়ম্বনা কিংবা খেয়ালি প্রকৃতির বিচিত্র মেজাজ- সবই ¤øান হয়ে যায় প্রিয়জনের সান্নিধ্যে। আর ঈদই এ মিলনের সুযোগ এনে দেয়। প্রিয়জনের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে সবাই ভুলে যান সব কষ্ট-বিড়ম্বনা। ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ঈদগাহ’র জামাতে এক কাতারে শামিল হবেন সবাই।
মূলত রমজানের শুরু থেকেই হয় ঈদের প্রস্তুতি। মুসলিম মিল্লাতের ধনী-গরীব সকলেই ঈদ উপলক্ষে সাধ্যমতো নতুন পোশাক কিনেন। নতুন কাপড় পরিধান করে ঈদগাহে যাওয়াটাও বাঙালির ঐতিহ্য। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে পাঞ্জাবি পরে ঈদের জামাতে যাওয়ার রেওয়াজ প্রচলিত হয়েছে। এ কারণে রমজানের শুরু থেকেই শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে কেনাকাটা জমে উঠে। মানুষ আর্থিক সঙ্গতি বিবেচনায় ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করে এবং প্রিয়জনদের উপহার দেন। ধনী ব্যক্তিরা দুস্থদের মধ্যে পোশাক বিতরণ করেন, রমজানে তারা জাকাতও আদায় করে থাকেন।
নগরীতে রমজান শুরুর আগে থেকেই শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে কেনাকাটা জমে উঠতে দেখা গেছে। মাসব্যাপী কেনাকাটা চলছে, সকাল থেকে গভীর রাত অবধি ক্রেতাদের পদভারে মুখর শপিং সেন্টারগুলো।
গতকাল সোমবার নগরীর অভিজাত শপিংগুলোতে মানুষের বেশ ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে বিপণী বিতান, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, টেরীবাজার, চকবাজার মতি টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, কেয়ারি ইলিশিয়াম শপিং সেন্টার, জিইসি মোড়ের স্যানমার ওশান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজা, প্রবর্তকের আফমি প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট এবং লালখান বাজারের আমিন সেন্টারসহ শপিং সেন্টারগুলোতে গতকালও জমজমাট কেনাকাটা হতে দেখা গেছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মানুষ পোশাক-পরিচ্ছদ কেনা শেষ করেছেন।
এখন সর্বশেষ অনুষঙ্গ হিসেবে আতর-টুপিসহ ছোটখাট সওদাপাতি বাকি রয়েছে। অবশ্য চাঁদ রাতের দিনও অনেক পরিবার কেনাকাটা করবেন। তবে চাঁদ দেখা যাওয়ার পর মুদি-সওদাপাতিতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষ। পরদিন অর্থাৎ ঈদের দিন অতিথি আপ্যায়নের জন্য সেমাই-চিনি, নুডলসম, ফল-ফলাদি এবং নানা ধরনের নাস্তা ও এর উপকরণ কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় লেগে যায়। এ দিন সারা রাত চলে কেনাকাটা।
এদিকে নগরীর প্রধান প্রধান মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে জমিয়তুল ফালাহ ময়দান, প্যারেড ময়দানসহ বিভিন্নস্থানে ঈদগাহ মাঠে শামিয়ানা-ত্রিপল টানানোর কাজ চলছে। ঈদ উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদের সামনে ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানারসহ তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
নগরীতে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে সকাল ৮টায়। এখানে দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। এছাড়া আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, চন্দনপুরা মসজিদ, বহদ্দারহাট জামে মসজিদ, কাতাল শাহ মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে নগরীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। ইতোমধ্যে অধিকাংশ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ায় নগরী অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। ঈদের পর বেশ কয়েকদিন এ রকম অবস্থা থাকবে। মানুষজন কম থাকার সুযোগ নিয়ে চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে যায়। এসব অপরাধ প্রতিরোধে সিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবার পুলিশকে সতর্কাবস্থায় রাখার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে অভয় দেয়া হয়েছে, নগরীতে অপরাধ কর্মকাÐ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নগরী সেজেজে অপরূপ সাজে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় শোভা পাচ্ছে ঈদ মোবারক খচিত প্ল্যাকার্ড। হাসপাতাল, এতিমখানা ও কারাগারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনসহ বিশেষ আয়োজন রাখা হবে।
ঈদ সামনে রেখে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে ঈদ সংখ্যা ও বিশেষ ক্রোড়পত্র। ঈদের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে পরিবেশিত বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে চার-পাঁচ দিন বিশেষ অনুষ্ঠান স¤প্রচারের আয়োজন করেছে।