আগুনে পুড়েছে শতাধিক দোকান

41


নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট ও জালালাবাদ মার্কেটে অগ্নিকান্ডে শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে। গতকাল শনিবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে জালালাবাদ মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আগুন হকার্স মার্কেটেও ছড়িয়ে পড়ে। সকাল পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন ফায়র সার্ভিসের কর্মীরা।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা এবং অপ্রশস্ত সড়কের কারণে নগরীর জালালাবাদ মার্কেট ও জহুর হকার মার্কেটে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা, দুই মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতা ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, শনিবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে কোতোয়ালী থানার জালালাবাদ মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত হলে পাশের পৌর জহুর হকার্স মার্কেটেও ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকান্ডে দুই মার্কেট মিলিয়ে শতাধিক দোকান ও গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, নগরীর পরীর পাহাড়ের পশ্চিম পাশে আদালত ভবনের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে টিনশেড, আধাপাকা জালালাবাদ মার্কেট। এর সাথে লাগানো জহুর হকার্স মার্কেট। দুই মার্কেটের মাঝে শুধু একটি সীমানা দেয়াল রয়েছে। এখানে আধাপাকা কাঠামোর ওপর দুইতলা গুদাম, ওপরের অংশ টিনের ছাউনি দিয়ে রাখা হয়েছে। অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের ১৯টি গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ১৯টি গাড়িতে থাকা পানি ব্যবহারের পর শেষ হয়ে গেলে সংলগ্ন দুটি মসজিদের ট্যাংক এবং সবশেষে লালদীঘি থেকে পানি এনে আগুন নেভানো হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে দুজন ফায়ার ম্যান সামান্য আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত হওয়ায় মার্কেটের দোকান ও গুদামগুলোতে লোকজন তেমন ছিল না। এখানে সবগুলো দোকানের দুই তলার ছাদ টিনের আর একটার সাথে অন্যটা লাগানো। টিনের নিচে আছে বোর্ড। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কেটটির গলিগুলোর প্রশস্ততা অনেক কম। আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে বিকালে এসব গলিতে পুড়ে যাওয়া কম্বল, শীতের পোশাক, টি শার্টের কাপড়, সেলাই মেশিন এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির অংশ জড়ো করা হয়।
ব্যবসায়ী অপু জানান, বৃহস্পতিবার শীতের পোশাকসহ বিভিন্ন রকমের দুই টন কাপড় তুলেছি। এর প্রায় সবই আগুনে পুড়ে গেছে।
জালালাবাদ মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কাজী আবদুল আজিজ বলেন, ৮০-৮৫টি প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মেয়র ও জেলা প্রশাসককে দিয়েছি। এখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মত রাস্তা নেই। খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসেছে। কিন্তু আগুন ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণে সময় লেগেছে।
জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন বলেন, অগ্নিকান্ডে ২৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢোকানো যায় না। আমাদের কাঠামোগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরের শুরুতে ফায়ার সার্ভিস নগরীর যে ৪৩টি বিপণিকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল তার মধ্যে জহুর হকার্স মার্কেটও আছে।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দীন বলেন, মার্কেটের ভিতরে আমাদের গাড়িগুলো ঢোকার কোন ধরনের সুযোগ না থাকায় পার্শ্ববর্তী অন্য দোকানের ছাদে দাঁড়িয়ে পানি ছিটাতে হয়েছে। এসব অননুমোদিত কাঠামো। নিচে হয়ত সেমিপাকা, ওপরে টিনের দোতলা। কোথাও কোথাও কাঠের কাঠামোও আছে। দেয়ালে কোনো আস্তরণ নেই। বৈদ্যুতিক লাইন এলোমেলোভাবে টানা। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তৈরি করা হয়েছে দোকানগুলো।
তিনি বলেন, আগেও একবার জহুর হকার্স মার্কেটে আগুন লাগার পর যেসব সুপারিশ দিয়েছিলাম, তার কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। এই দুই মার্কেটে অগ্নি নির্বাপনে কোনো সরঞ্জাম নেই, এমনকি ফায়ার লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টায় আজ প্রাণহানি হয়নি। ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারত। তদন্ত কমিটি করে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় নির্ধারণ করা হবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, অগ্নিকান্ডে ১৩০টির মতো দোকান পুড়ে গেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এর মধ্যে ২০-২৫টি দোকান হকার্স মার্কেটের এবং বাকি দোকানগুলো জালালাবাদ মার্কেটের।