আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নিশ্চিন্তে, অন্যরা শঙ্কায়

62

সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা প্রচারণা চালানোর দাবি করলেও বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন।
গতকাল সকালে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে প্রার্থীরা এমন মতামত জানান। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ছয় আসনের এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাকি দশ আসনের প্রার্থীদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় পক্ষে-বিপক্ষের প্রার্থীদের ভিন্নমত থাকলেও সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণের কথা জানিয়েছেন দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও ছয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পারিবারিক ও আত্মীয়তার বন্ধন আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এটা অত্যন্ত সহায়ক। অন্যান্য এলাকার চেয়ে চট্টগ্রামের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে গণসংযোগ করতে পারেন সেটা আমরা দেখবো। মানুষ অবশ্যই ভোট দিতে যেতে পারবে। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করবেন না। দেখুন, অপেক্ষা করুন। বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও পরোয়ানা নেই, তাদের বিষয়ে পুলিশের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও দশ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ভোটের মাঠে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকবে। যেভাবে ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে সেভাবে আসলে হয়নি। গুজব ছড়িয়ে, বাড়াবাড়িভাবে বলে ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। যতটুকু ঘটনা ঠিক ততটুকু আমাদের জানান। আমরা ব্যবস্থা নিব। গুজব ছড়ালো দেখবেন সত্য ঘটনাটিও ধামাচাপ পড়ে যাবে।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের বিএনপি প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভোটারদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় শঙ্কা- ভোট দিতে যেতে পারব তো? একথা আসলো কেন? এই ‘ফিয়ার সাইকোসিস’ সৃষ্টি কারা করল? এই যে গায়েবি মামলা- এটা কার চিন্তা? এর উদ্দেশ্য কী? এমন কী বাধ্যবাধকতা যে বাড়ি থেকে আমাদের দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এমনকি এজেন্টদেরও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রার্থীদের প্রচারণার আগে-পরে ওই এলাকায় তান্ডব। পুলিশ ভিডিও করছে প্রচারণা। এসব কী দেশের মানুষ দেখছে না?”
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সব থেকে বড় প্রশ্ন আজ কেন একটি দলের জন্য প্রশাসন এ ভূমিকায়? একটা উদাহরণ দেন যে ঘটনার তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জবাবে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ভোটারদের মধ্যে কোনো ভয়-ভীতি দেখছি না। অথচ বারবার এটা যখন বলা হচ্ছে, তখন প্রেক্ষাপট দেখা দরকার। ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিরোধের নামে যে তান্ডব, আগুন সন্ত্রাস ও হত্যাকান্ড চালানো হয় একটি দলের নেতৃত্বের নির্দেশে- তখনই ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কেউ ভয়ের কাজ করলে, কোনো তান্ডব-হত্যায় সম্পৃক্ত থাকলে তাদের মধ্যেই ভয় আসে। প্রার্থী হিসেবে আমিও শঙ্কিত, তারা যদি আবার কিছু ঘটায়। ভোটাররা ভোট দিতে পারবে কিনা? এর কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শত শত ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় আমীর খসরু বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, উনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। তখন বিভাগীয় কমিশনার নওফেলের উদ্দেশে বলেন, আপনি বলেছেন, আমরা শুনেছি। আপনার নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে কিছু বলার থাকলে বলুন। ইভিএম নিয়ে যদি কিছু বলতে চান। তখন নওফেল জানান, তার চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইভিএম নিয়ে নারী ভোটারদের মধ্যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, রবিবার নয়াবাজারে বিজয় শোভাযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার সময় লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। তারা আমাকে গুলি করতে উদ্যত হয়। আমার এ অবস্থা হলে নেতাকর্মীদের কী অবস্থা? নির্বাচনের পরিবেশ তো নেইই, পরিবেশের আরো অবনতি হচ্ছে। এভাবে চললে দেশে গণতান্ত্রিক ধারার অবনতি হবে। এর দায় আপনাদের নিতে হবে। পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, নেতাকর্মী-এজেন্টদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার, এলাকা ছাড়তে হুমকি এবং নির্বাচনী কাজে জড়িতদের গায়েবি মামলা দেওয়ার অভিযোগ করে নগরীর বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের অদল-বদল করার প্রস্তাব দেন বিএনপির এই নেতা।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা নিয়ে যেহেতু নির্বাচনে এসেছে, পার্থক্য তো আমাদের আছেই। নির্বাচনে জড়িতদের দোষারোপ করে তাদের কাছ থেকে আবার সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে সেটা সম্ভব না। আইন অনুসারে কাজ করতে বিভাগীয় কমিশনারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি আহব্বান জানান বাদল।
সভায় চট্টগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান ও চট্টগ্রাম-৫ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নির্বাচনী প্রচারে বাধা, নেতাকর্মীদের নির্বাচারে গ্রেপ্তার, পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেন।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্র্ণফুলী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সরোয়ার জামাল নিজাম বলেন, কর্ণফুলীর ওসিকে চিঠি দিয়ে আমি প্রচারণা শুরু করেছিলাম। কিন্তু সকাল থেকে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন সেখানে গিয়ে বাধা দেয়। ওসিকে জানালে তিনি বলেন, অন্যদিকে করেন আপনি। প্রতিদিন পশ্চিম পটিয়ায় আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ৫টা করে মামলা হচ্ছে। আমাকে এলাকায় যেতে দিচ্ছে না। অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। এই আচরণবিধি কি শুধু আমাদের জন্য, নাকি সরকারি দলের জন্যও প্রযোগ্য। আমাদের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষ প্রার্থী সমস্যা করছে। আমাদেরকে পুলিশ দেন। আমরা সাংবাদিক নিয়ে প্রচারণা করবো। প্রশাসনের প্রতি জিডি গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমাকে জানাননি আপনি। সরোয়ার জামাল নিজাম বলেন, আপনাকেও চিঠি দিয়েছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, চিঠি দিলেও অনেক সময় হয় না। সরাসরি জানালে ভালো হয়। ফোন দিতে পারতেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের বিএনপি প্রার্থী এনামুল হক এনাম বলেন, গায়েবি মামলায় অজ্ঞাত আসামি রাখা হয়েছে। গতকাল রাতে কয়েকজনের বাড়িতে পুলিশ গেছে। মা-বোনদের ধাক্কা পর্যন্ত দিচ্ছে। এগুলো যদি সুরাহা না করে ভয়ভীতি দেখালে নির্বাচন পরিবেশ থাকবে না। সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ওয়ারেন্ট থাকলে গ্রেপ্তার করলেও বলছেন আমার লোকজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এদের না ধরলে পুলিশের চাকরি থাকবে না। বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। একেবারে দোষত্রুটিমুক্ত কাউকে আটক করা হচ্ছে বলে তথ্য দিলে আমরা দেখবো।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের বিএনপি প্রার্থী মো. আজিম উল্লাহ বাহার বলেন, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। আমি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। ওসিকে জানিয়েছি। বলেছে, দেখছি।
জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, পোস্টার লাগালে কিংবা ছিড়লে কেউ হেরে যাবে তা না। এরপরেও কেউ যাতে পোস্টার না ছিঁড়ে সেদিকে নজর রাখবো। সবার জন্য আমি চাই সমান সুযোগ।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুচ্ছফা সরকার বলেন, পটিয়ায় আমাদের কোন মহাজোট প্রার্থী নাই। তবু আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিজেকে মহাজোট প্রার্থী দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছে। জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আপনার দল থেকে আমাকে পাঠাতে বলেন। আমি বিষয়টি দেখবো।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের বিএনপি প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, আমার নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। আমার ১১টি মাইক ভেঙে দিয়েছে। আমার লোকজনকে মারধর করছে। জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমি দেখবো।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের ২০ দলীয় জোট প্রার্থী আ ন ম শামসুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জাফর সাদেক অভিযোগ করেন, কারাগার থেকে বের হতে চাইলে আমাদের প্রার্থীকে হাটহাজারীর একটি মামলায় পুনরায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন দিলেও মুক্তি না দিয়ে আদালত অবমাননা করা হয়েছে। আচরণবিধির সাথে নির্বাচনী মাঠের অবস্থা ভিন্ন। পুলিশ নিজেও পোস্টার ছিঁড়ছে। সরকারী দলের লোকজন সন্ত্রাসী কায়দায় গাড়ি নিয়ে এসে অপহরণ করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। নির্বাচনী বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি নোট নিচ্ছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।’
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে ২০ দলীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী নুরুল আলম বলেন, আমার এখানে চারটি মামলায় ১০-১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কেউ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি না। আমার একমাত্র ছোটভাই ও নির্বাচনী সমন্বয়কারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি আপনাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এগুলো করতে আওয়ামী লীগের সাথে প্রশাসনের কয়েকজন ছোটখাট কর্মকর্তা সহযোগিতা করছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী মাহমুদুল ইসলামের প্রতিনিধি জানান, জাপা প্রার্থী এলাকায় যাওয়ার পর জোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের ছেলেরা পোস্টার ছিঁড়ছে, প্রতীক নামিয়ে ফেলছে। হারুন বাজারে যে সমস্ত ব্যক্তি পোস্টার ও প্রতীক নামিয়েছে তাদের দিয়ে তা আবার তুলে দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। হামিদিয়া মাদ্রাসা ও গালর্স কলেজের কোন শিক্ষককে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি। আওয়ামী লীগের যত ক্ষোভ লাঙ্গলের উপর কেন? আমরা ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন চাই।
জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, উনি (মাহমুদুল ইসলাম) আমাকে মাঝেমধ্যে ফোন দেন। উনি না বলে আপনি আসলেন কেন? আর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা কারা থাকবেন, তা আমাদের বিষয়। আমরা নিরপেক্ষতা দেখে এসব কর্মকর্তা নিয়োগ করি। দেখেশুনেই তা করে থাকি।
চট্টগ্রাম-১৩ ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী এড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা জানি প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা কতটুকু। কোন প্রার্থী অভিযোগ দিলেও জানেন, না দিলেও জানেন। তবে আমাদের সাবেক ও বর্তমান সাংসদরা চাইলে তাঁদের অতিউৎসাহী কর্মীদের দমাতে পারে। সামাজিক ও সম্প্রীতি যাতে বিনষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু জাফর মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, নীতিবাচক কথা আসছে। ইতিবাচক কথা আসছে না। বাকি ১৩দিন আমরা কিভাবে কাটাতে পারি সেটি নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। কোন এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট দেখি নাই। কোন প্রার্থী তিন মিটারের জায়গায় ব্যানার লাগিয়েছে তিন কিলোমিটার। জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটও আপনার মতো মানুষ। যখন প্রয়োজন হবে তখনি হাজির হবে।
একই আসনের এলডিপি প্রার্থী কর্ণেল (অব.) অলি আহমদের প্রতিনিধি বলেন, আমাদের প্রার্থীর বড় ছেলের উপর হামলা করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘উনি বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। উনি কমপক্ষে দশবার ফোন দেন। ইতোমধ্যে আমাদের কর্মকাÐে খুশি হয়ে উনি ধন্যবাদ দিয়ে ম্যাসেজ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্ত করা হয়েছে। যেভাবে আপনারা বলছেন সেভাবে সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, হারুন বাজার নামক এলাকায় আমার পোস্টার ছিঁড়া হয়েছে। কে বা কারা গোলাগুলি করেছে। সাধনপুরে পোস্টার ছিঁড়া হয়েছে। গোলাগুলি যারা করেছে তাদের গ্রেপ্তার করুন।
একই আসনে বিএনপি প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সুন্দর পরিবেশ কিছুটা বিশৃঙ্খল করার চেষ্টা চলছে। পুরো এলাকার দুই একটি জায়গা এটি করা হচ্ছে। সরকার দলীয় প্রার্থীর নিজ বাড়ি সরলে চেয়ারম্যানের লোকজন ঝামেলা করছে। ঐ এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব আমার দলীয় নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে প্রচারণা থেকে দূরে রাখতে বাধ্য করছে। সেখানে পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারা নিজেরাই ঝামেলা করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে পুলিশকে বাধ্য করছে। বাঁশখালীতে যাতে নির্বাচনী পরিবেশ ভালো থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। চেয়ারম্যানরা প্রতিদিন নেতাকর্মীদের সাথে ঝামেলা করছে। প্রার্থীর চাচা রশিদ আহমদ বেশি ঝামেলা করছে। উনি ভোট ছাড়া চেয়ারম্যান হয়েছেন। ২০০ মোটরসাইকেল নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শোডাউন দিলে আচরণবিধি কোথায় থাকে। সকলের প্রতি সমান আচরণ করুন।
তিনি বলেন, আগের মতো রাতের বেলা ভোট দিয়ে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিন। সেদিন চলে গেছে। মানুষ জীবন দিবে ভোট ডাকাতি করতে দিবে না। জনগণ যাকে ভোট দিবে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিব। জীবন গেলেও ভোটের মাঠ ছাড়বো না। জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘সরলের চেয়ারম্যানের বিষয়টি নোট নিচ্ছি। আমি বিষয়টি দেখবো।’
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের মহাজোট প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ভোটের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর আছে। আমরা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরী বলেন, আমার আসনে একটা কেউ কারো পোস্টার ছিঁড়ে নাই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পটিয়ায় আছে। সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানে সমান। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার শক্তি দেখাবেন। সমস্যা নাই। তিনি বলেন, যুবলীগের নেতার অন টেস্ট মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি চুপ আছি। নিজে নতুন গাড়ি কিনে দিব বলেছি। এ সময় বিএনপি প্রার্থী এনাম বলেন, ‘অবজেকশন’।
সবার মতামত শুনে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মীনা বলেন, আচরণবিধি যাতে কার্যকর হয় সেজন্য ওসিদের বলবো। চন্দনাইশে প্রার্থীর যে স্বজন আহত হয়েছে সেটি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। আমি হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছি। গায়েবি মামলা নামে কোন শব্দ নাই। যে বিষয়টি আদালতের তা নিয়ে মন্তব্য নাই। এখানে কোন সরকার নির্বাচন করছেন না, নির্বাচন করছেন ঐক্যজোট-মহাজোট। কয়েকজন প্রার্থী ভিওআইপি কল দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে যোগাযোগ করছে। নির্বাচনে ঝামেলা করার হুমকি দিচ্ছে এমন তথ্য পেয়েছি। নির্বাচনী মাঠে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ থাকে। ইসি যে ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে আমরা সেভাবেই পালন করছি। নেতাদের অবশ্যই সৌহার্দ্য দেখাতে হবে। কেউ যদি জীবন দেয়ার কথা বলেন, তাহলে তো কর্মীরা আরো বেশি উত্তেজিত হবে। তিনি বলেন, দায়িত্ব পালণ করতে গেলে প্রথম আক্রমণ আমাদের উপর হয়। আমরা আমাদের কাজ করবো। স্বীকৃতি দেন আর না দেন।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সভায় অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার শঙ্কর রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ এবং নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।