আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরেই কমিটি ভাঙাগড়া শুরু

61

আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরেই শুরু হবে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির ভাঙাগড়া। চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। কেন্দ্র থেকে নতুন করে এ তিন ইউনিটের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইসাথে সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় নিয়মিত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব কমিটি ভেঙে নতুন করে কমিটি গঠন করে সংগঠনকে চাঙা করার নির্দেশনাও আছে। আর কমিটি ভাঙাগড়ার এ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরেই শুরু করতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
ইতোমধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও উপজেলার কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটি। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম উত্তর, ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দুই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। অক্টোবরের মধ্যেই সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করেই জাতীয় সম্মেলন করতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কমিটি ভাঙা ও গঠন নিয়ে যত চাপাচাপি দেখা যাচ্ছে তত তৎপরতা চোখে পড়ছে না চট্টগ্রামে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরেই কেন্দ্রীয় নেতারা একেকটি জেলায় সফর করবেন। সেখানে অবস্থান করে নেতাদের সাথে কথা বলে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত দিবেন। দ্রæত সময়ের মধ্যে টিমের সদস্যরা জেলা সফরে যাবেন এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দিবেন। সব কমিটি নিয়মিত করতে হবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ নেই। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। দল ক্ষমতায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে নগরে পিছিয়ে আওয়ামী লীগ। ইউনিট, থানা ও ওয়ার্ডে নিয়মিত কমিটি নাই। সম্মেলন প্রথা একপ্রকার উঠেই গেছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুবলীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। উত্তর জেলারও একই অবস্থা বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে কোনো ইউনিট সম্মেলন হচ্ছে না আওয়ামী লীগে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ । ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে হবে। আর তার আগেই ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে হবে। একইভাবে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সম্মেলন করা হবে। সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্র থেকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেন, ‘উত্তর জেলার আওতাধীন সাতটি উপজেলা আছে। এ উপজেলাগুলোর সম্মেলন হয়েছে। স›দ্বীপে ২০১১ সালে, সীতাকুন্ডে ২০১২ সালে, রাউজানে ২০১২ সালে ও ফটিকছড়িতে ২০১৬ সালে কমিটি হয়েছে। দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি মারা যাওয়ায় সেখানে কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে। বাকিগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়নে কমিটি আছে। তবে বেশিরভাগ কমিটি নতুন করে করতে হবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আটটি সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে চারটির সম্মেলন করতে পেরেছি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন দ্রুত করবো। ৯০টি ইউনিয়ন ও ৩২০টি ওয়ার্ড আছে। প্রত্যেক ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে সাংগঠনিক কমিটি আছে। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি প্রায় মেয়াদোত্তীর্ণ। কেন্দ্রীয় কমিটি যখনই বলবে তখনই কমিটি করবো।’

আজ আওয়ামী
লীগের ৭০তম
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
পূর্বদেশ ডেস্ক
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আজ ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই দলটি প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।
যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজধানী এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় কর্মসূচি শুরু হবে আজ সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে।
এছাড়াও দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ সূর্যোদয়কালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে এবং সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় দলের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
আগামীকাল সোমবার বিকাল ৪চায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের অর্জন পাকিস্তান আমলের গণতান্ত্রিক মানুষের অর্জন, এই দলের অর্জন বাংলাদেশের অর্জন। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন মনে করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করেছে এ দলটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু দেশের পুরনো ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলই নয়, এটি গণতন্ত্র ও অসা¤প্রদায়িক ভাবাদর্শের মূলধারাও। প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের সমাজ-রাজনীতির এ ধারাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী অসা¤প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। আর অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশের গড়ার কাজ প্রথম শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি এ দলটিকে দেশের অন্যতম প্রাচীন সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, ভাষা, স্বাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনে মহোত্তম গৌরবে অভিষিক্ত আওয়ামী লীগের সাত দশকের অভিযাত্রায় শান্তি, সমৃদ্ধি ও দিন বদলের লক্ষ্যে অবিচল বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী।
ইতিহাসবিদ, লেখক ও লোক সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান এই দলকে মূল্যায়ন করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ‘পাকিস্তান’ নামের অবৈজ্ঞানিক এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্তি¡কভাবে এক উদ্ভট রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে অবজ্ঞায়, অবহেলায় ও ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ-পীড়ন-দমন ও ‘দাবিয়ে রাখা’র বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাস বিদিত ।
বিশিষ্টজনদের মতে দলটির বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে সফলতার নতুন পথ দেখিয়েছেন, দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করার সুবাদে বাংলাদেশের মর্যাদা আন্তর্জাতিকভাবে সৃষ্টি করেছে এবং আমরা মর্যাদাশীল জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছি।
পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে তা শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসা¤প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এ দলটি।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৪-এর দাঙ্গার পর সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হলেও দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলটির প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে।
২০০১ এবং পরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি এবং ২০১৮ এর ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে এ দলটি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গতকাল এক বিবৃতিতে দলের গৌরবোজ্জ্বল ৭০ বছর পূর্তিতে গৃহিত কর্মসূচি পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। খবর বাসস’র