আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ‘ঢাকা মিশন’

56

আগামী ১৪ অক্টোবর সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সবকটি কেন্দ্রেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর বাছাই ও ২২ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ খুবই সন্নিকটে। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতকরণে অর্ধডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মিশনে নেমেছেন। সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করে দলীয় কার্যালয়, নেতাদের অফিস ও বাসায় ধর্না দিচ্ছেন নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য। বর্তমানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার, কার্যনির্বাহী সদস্য মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি বশির আহমদ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু ছালেহ। এর মধ্যে নুরুল আবছার চৌধুরী, গোলাম ফারুক ডলার ও আবু ছালেহ মাঠে বেশ তৎপর। এছাড়াও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও নানা কর্মসূচি পালন করার কারণে তিনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে। তবে ডা. মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আমি দলের কাছে মনোনয়নের জন্য আবেদন করিনি। দল যদি সঠিক মূল্যায়ন করে আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করব। আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্যজনকে মনোনয়ন দিলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব।
জানা যায়, ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী ডা. নুরুল হককে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মোনাফ। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কারাবন্দী অবস্থায় ৬৪ হাজার ৬শ ২৭ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জসীম উদ্দীন। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল আবছার চৌধুরী পান ৪৫ হাজার ৮ শত ৪০ ভোট। আর ২৯ হাজার ৩শ ৩৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন। বর্তমানে বিএনপি কিংবা জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচন করবে কিনা। করলেও প্রার্থী কে হবে তা আলোচনায় না আসলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ আটঘাট বেধেই মাঠে নেমেছেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভা শেষে দলের পক্ষ থেকে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপিকে একক প্রার্থী করে কেন্দ্রে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশ হলে অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন। পরে সর্বশেষ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আসায় মনোনয়ন প্রক্রিয়া থমকে যায়। তবে অনেকে মাঠ চষে বেড়ালেও দলীয় কর্মসূচির বাইরে তেমনটি প্রচারণা চালাননি এমএ মোতালেব। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলের মনোনয়নের বিষয়ে নুরুল আবসার চৌধুরী বলেন, গত নির্বাচনে আমাকে পরাজিত করার জন্য দলের কিছু নেতা আমার বাড়ি থেকে এডভোকেট আব্দুর রকিব চৌধুরীকে প্রার্থী করেছিল। আমি দলীয় ষড়যন্ত্রের কারণেই হেরেছিলাম। এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলে আমার বিজয় নিশ্চিত। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার বলেন, সাঈদীকে চাঁদে দেখার কথা বলে জামায়াত-শিবির যে তাÐব শুরু করেছিল তা প্রতিরোধের জন্য আমিই দলীয় নেতাদের সংগঠিত করেছিলাম। আজকের মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক নেতা সেইদিন সাতকানিয়ায় যায়নি। আমি মনোনয়ন পেলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হবে। বিজয়ের সম্ভাবনাও শতভাগ। কারণ আমিও তৃণমূলের রাজনীতি করে এ পর্যায়ে এসেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি দলের দুঃসময়ে তৃণমূলের ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দলকে উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত সংগঠিত করেছি। প্রতিটা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে জীবনবাজি রেখে ভূমিকা রেখেছি। সবকিছু মিলিয়ে দলীয় মনোনয়ন আমি পাব বলে আশা রাখি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু ছালেহ বলেন, সাতকানিয়ার মধ্যে আমার পরিবারটি নির্যাতিত পরিবার। আওয়ামী লীগ করার কারণে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি ছাত্রজীবন থেকে মুজিবাদর্শের রাজনীতির সাথে জড়িত। সাতকানিয়ার প্রতিটি ইউনিয়ন আমার জানাশুনা। আমি দলীয় মনোনয়ন পেলে নৌকার বিজয় হবেই।