আওয়ামী লীগের কাউন্সিল স্থগিত বরকলে

25

জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে কাউন্সিলর করার অভিযোগ উঠায় রাঙামাটির বরকল উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল’ স্থগিত করেছে জেলা নেতৃবৃন্দ।
অভিযোগ উঠেছে, নিজেদের জয়লাভ নিশ্চিত করতেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী যুবলীগের সভাপতি, ৪নং ভূষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ (মামুন) এমনটি করেছেন। অবশ্য দুজনই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মামুনের পাল্টা অভিযোগ, ‘নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই সম্মেলন স্থগিত করেছে জেলা নেতৃবৃন্দ’।
গত ৩০ অক্টোবর সকালে উপজেলা পরিষদ মাঠে বরকল আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের শুরুতেই নেতাকর্মীরা ‘জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে কাউন্সিলর বানানোর অভিযোগ’ তুলে শোরগোল শুরু করেন। সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিক ১৪ জনকে কাউন্সিল থেকে বের করে দেন জেলা নেতারা। এ সময় ‘দলে অনুপ্রবেশকারীদের’ কাউন্সিলর বানানোর অভিযোগটি আরো জোরালো হতে থাকে। মুখোমুখি হন দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাউন্সিল স্থগিত ঘোষণা দিয়ে রাঙামাটি ফেরেন জেলা নেতারা। এরপর থেকেই স্থানীয় নেতা-কমর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মামুনের ভূষণছড়া ইউনিয়ন কমিটিতে ঘাপলা বেশি। মামুনের হাত ধরে আওয়ামী লীগে আসা ইউনিয়ন কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও সদস্য মুহাম্মদ আব্দুল্লাহর সাথে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কাউন্সিলর হওয়া অন্তত ১০ জনকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাবি করেছেন একাধিক নেতাকর্মী। এছাড়া মামুনের অনুগত না হওয়ায় ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, ৩ ও ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও কাউন্সিলর করা হয়নি। অবশ্য মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জামায়াতের সাথে যুক্ত ছিলেন বলে স্বীকার করেন মামুন।
নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ‘সুবীর ও মামুন মিলে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতির লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছেন। জনসংহতি সমিতি চায় না চাকমারা আওয়ামী লীগ করুক’। নইলে- ভূষণছড়া ইউনিয়নে ১০৭২৮ জন ভোটারের মধ্যে চাকমা ভোটার ৭০৫৭ জন। আর ২নং বরকল ইউনিয়নে ৪৭১৫ জন ভোটারের মধ্যে চাকমা ৩১৫৫ জন হলেও কেন মাত্র ২ জন করে কাউন্সিলর করা হয়েছে। পুরনোদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের কাউন্সিলর করা হয়েছে।
সভাপতি প্রার্থী ও দলটির সহ-সভাপতি প্রভাত কুমার চাকমা অভিযোগ করেন, ‘সুবীর ও মামুন নীলনকশা করে পদ দখল করতে চেয়েছেন। আমি দীর্ঘদিন বরকল ইউপির চেয়ারম্যান থাকায় চাকমা সম্প্রদায়ের অনেকে আওয়ামী লীগে এসে কাজ করেছেন। তাদেরকে কাউন্সিলর হিসেবে না রেখে জামায়াত-শিবিরের লোক ঢুকিয়েছে’।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. নজরুল বলেন, ‘কাউন্সিলরদের নামের তালিকা ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক দিয়েছেন। তাই আগে থেকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি’।
সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার চাকমা বলেন, ‘অভিযোগ উঠায় ১৪ জনকে তাৎক্ষণিক বাদ দিযে কাউন্সিল স্থগিত করেছে জেলা কমিটি। চাকমা লোকজন আওয়ামী লীগে আসতে চায় না বলে কাউন্সিলর তালিকায় নেই।
মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘অভিযোগের সত্য-মিথ্যা উনারাই (জেলা নেতৃবৃন্দ) বলবেন। আমরা আগেই জেনেছি, তারা নির্বাচন দেবে না, কৌশলে স্থগিত করে পরে জেলা থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে। শুধুমাত্র আমাদেরকে দেখানোর জন্য সম্মেলন করলো, কিন্তু তাদের এজেন্ডা তারা কৌশলে বাস্তবায়ন করেছে’।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জমির উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘সেখানে জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে কাউন্সিলর করা হয়েছে। এমন অন্তত ১৪ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। সত্যতা পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার (এমপি) কাউন্সিল স্থগিত করেছেন’।