আইনের দ্রুত প্রয়োগ হোক

32

সনেট দেব

চারদিকে আত্মচিৎকার! এক অসহ্য যন্ত্রণা! মানব সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষরূপে কিছু জানোয়ার আজ খামছে ধরেছে দেশের মা-বোনের ইজ্জত। বাদ যাচ্ছে না ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধা। দেশে আশঙ্কা জনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অপরাধ, খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, পারিবারিক কলহসহ নানা অপরাধ প্রবণতা। আইনের কঠোর শাস্তির বিধান করেও এই অপরাধের লাগাম টানা মুশকিল হয়ে উঠেছে। বিপদগামী তরুণ প্রজন্ম, আইনের প্রয়োগহীনতা, রাজনীতির ছত্রছায়া, কিছু পুরুষের উগ্র-মানসিকতাসহ বেশকিছু কারণে এ অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে বলে আমার বিশ^াস। যার লাগাম এখন টেনে না ধরলে আগামী দেশ বিনির্মাণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ৪১ জন। প্রতিমাসে গড়ে ১১১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি সংস্থাটির দেয়া এ পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, দেশে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ নারী ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ নারী। এছাড়া ২০১৮ সালে ৭৩২ জন এবং ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ নারী। ২০১৮ সালের চেয়ে গত বছর শিশু ধর্ষণ ৭৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে।
কিন্তু এমন ঘটনা দিন দিন কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে? অনেক সময়ই ঘটনার সুষ্ঠু কোনো বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। মূলত বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এছাড়াও নিন্দনীয় এ ঘটনার পেছনে দায়ী আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, নৈতিক ও যথাযথ শিক্ষার অভাবসহ মাদকের মতো বেশকিছু বিষয়। এ ঘটনার বিস্তার রোধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করছি। পাশাপাশি কথিত এই ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করাও উচিত এবং শাস্তির বিষয়গুলোও প্রচার করা দরকার গণমাধ্যমে যাতে কেউ এই ধরনের হীন কাজ করার সাহস না পায়। এছাড়াও পরিবার-সমাজ, বিদ্যালয়ের মতো জায়গাগুলোতে নৈতিক শিক্ষার বিস্তার করা, লিফলেট-ব্যানার-পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে। ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান যোগ করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এর পরদিন এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে সই করেন রাষ্ট্রপতি, যার ফলে সংশোধিত আইনটি কার্যকর হয়েছে। ধর্ষণ ঘটনার মামলাগুলো দ্রুতবিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে আইন কার্যকরের দ্রুত প্রয়োগ চাই।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী