আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে

46

সম্প্রতি শিশুহত্যা ও অপহরণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। চট্টগ্রামসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভয়ঙ্কর শিশু অপহরণের খবর সংবাদপত্রে এসেছে। এতে নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়ে গেছে। ঢাকার এক শিশু অপহরণচক্রের সন্ধান পুলিশ পেয়েছে বলে জানা গেলেও চট্টগ্রামে অপহরণকারীদের এখনও সন্ধান মিলেনি। পুলিশ বলছে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, শিগ্গিরই অপহরণকারীরা ধরা পড়বে। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশসহ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ‘বাবা পাঠিয়েছে’ বলে মুসলিম হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা। অবশ্যই অপহরণের তিনঘন্টার মধ্যে পুলিশ এ শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে অপহরণকারীদের গ্রেফতার করতে পারে নি। সূত্র জানায়, রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. সামশুল ইসলামের ছোট ছেলে সাইদুল ইসলাম শামীদকে গতকাল স্কুল ছুটির পর নিতে আসেন তার মা। কিন্তু স্কুল ক্যাম্পাসে শামীদকে না পেয়ে তিনি বিষয়টি শামীদের বাবাকে মোবাইলে জানান। ছেলেকে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সামশুল ইসলামের মোবাইলে একটি ফোন আসে। এতে তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা। বেলা ১২টার দিকে কোতোয়ালী থানা পুলিশকে তিনি বিষয়টি অবহিত করেন। পুলিশ তৎপরতা শুরু করলে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শামীদকে ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে শামীদকে উদ্ধারের বিষয়টি অবহিত করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান। তিনি বলেছেন, পুলিশের তৎপরতায় অপহরণের মাত্র ৩ ঘণ্টার মাথায় শিশু শামীদকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আমরা শামীদের বাবাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানায় এ জন্য যে, তিনি অপহরণকারীদের গোপনে কোন মুক্তিপন না দিয়ে বরং পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ছেলেকে উদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছেন। একইসাথে পুলিশ বাহিনীর ভুমিকাও প্রশংসাযোগ্য। আমরা সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছয়মাসে চল্লিশের অধিক শিশু অপহরণের পর অপহরণকারীদের দাবি অনুযায়ী অভিভাবকরা মুক্তিপন দিয়ে গোপনে সন্তানদের মুক্তি নিয়ে আসেন। যা আমাদের জন্য দূর্ভাগ্যের। সর্বশেষ ওই অপহরণকারী চক্র পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
আমরা জানি, অপহরণের বিষয়টি এই দেশে নতুন নয়। সাম্প্রতিক সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আমলে নিলেও যে চিত্র পরিলক্ষিত হয়, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাতে বলা হচ্ছে, অপহরণকারীদের অনেকে পুলিশের জালে আটকে গেলেও পরে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের দুর্বল চার্জসিটের কারণে কৌশলে জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। ফলে অপহরণকারীরা আবারও তাদের পূরনো কাজে সক্রিয় হয়ে উঠে। বিষয়টি এমন যে, পুলিশ একদিকে অপরাধীদের আটক করছে, অপরদিকে কৌশলে তাদের জামিনের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। শিশু অপহরণের ঘটনাগুলো একদিকে যেমন হৃদয়বিদারক, অন্যদিকে ভয়ানক অধ্যায়কেই নির্দেশ করে। শিশু সুরক্ষায় দেশে আইনি কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে; নেয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বেড়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ছোট ও নিষ্পাপ শিশুদের অপহরণ করার পর টাকা আদায়ের টোপ বা কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করা নিকৃষ্টতম মানসিকতার পরিচায়ক। আর অপহরণকারীদের বিষয়ে কোনরকম শৈথল্য মনোভাব একইরকম অপরাধ বলে ধরে নিতে হবে। এই ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে তা মানুষের স্বাভাবিক জীবনকেই ব্যাহত করবে। অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে অভিভাবকদেরও।