অ্যান্ড্রয়েডের ইতিহাস ও অ্যাপ সতর্কতা

83

এই যুগে স্মার্টফোন সম্পর্কে জানেন না এমন কাউকে খুব সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই আর কিছু চিনুক আর না চিনুক স্মার্টফোন কীভাবে চালাতে হয় তা ভালোমতোই জানে। আমার এক বন্ধুর বাবা সারাজীবন কী প্যাড ফোন ব্যবহার করতেন। দুর্ভাগ্যবশত কিছুদিন আগে উনার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে যায়। তো বন্ধুটি তার বাবাকে নতুন একটি স্মার্টফোন কিনে দিল। শুরুতে উনি বিরক্ত হলেও কয়েকদিন পর বন্ধুটি দেখল তার বাবা মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে ইউটিউবে খবর শুনছেন। বন্ধুটি বাবার কাছে যেতেই বাবা বলে উঠলেন, যুগ কত যে পাল্টেছে তা এই মোবাইল ফোন না হলে বুঝতেন না। ছোট ছেলের কাছ থেকে তিনি ইউটিউব চালানো শিখে গেছেন। এখন অবসর সময়ে ইসলামিক ওয়াজ ও খবর শুনে ভালোই সময় কাটছে তার। ঘটনাটি শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন স্মার্টফোনের অবদান আমাদের জীবনে কী রকম প্রভাব বিস্তার করেছে। স্মার্টফোন বলতে আমরা বেশির ভাগ মানুষই বুঝি অ্যান্ড্রয়েড ফোন যদিও স্মার্টফোনের জন্য আরো অনেক অপারেটিং সিস্টেম আছে।
অ্যান্ড্রয়েড হলো স্মার্টফোনের জন্য তৈরি এক ধরনের অপারেটিং সিস্টেম যেখানে মিডলওয়্যার (একাধিক এপ্লিকেশনের মধ্যে সহজ যোগাযোগের জন্য মিডলওয়্যার ব্যবহৃত হয়ে থাকে) ও কিছু বিল্ট-ইন এপ্লিকেশন রয়েছে। ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কম্পিউটার যেমন উইন্ডোজ ১০ উইন্ডোজ ৭, ম্যাক ওএস, লিনাক্স নামের বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে চলে তেমনি স্মার্ট মোবাইল ফোনের (স্মার্টফোনের) একটি অপারেটিং সিস্টেমের নাম অ্যান্ড্রয়েড। এই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি বাজারে নিয়ে আসে গুগল। অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেন সোর্স মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম যেটি মোডিফাইড লিনাক্স কার্নেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ২০০৩ সালে অ্যান্ডি রবিন, রিচ মাইনার, নিক সিয়ারস, ক্রিস হোয়াইট মিলে অ্যান্ড্রয়েড ইনকর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ডিজিটাল ক্যামেরার জন্য একটি উন্নতমানের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা যদিও পরে তারা বুঝতে পারেন ডিভাইসটির বাজার বেশি বড় নয় তাই কোম্পানিটি মনোযোগ দেয় স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম তৈরির ওপর। এর উদ্দেশ্য ছিল এটি সিমবিয়ান (নোকিয়া ফোনের অপারেটিং সিস্টেম) এবং মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ মোবাইল মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলোর সাথে পাল্লা দেবে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে গুগল প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেয় এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রধানদের স্বপদে বহাল রাখে যাতে সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট আগের মতোই চলতে থাকে। যেহেতু লিনাক্স একটি মুক্ত অপারোটিং সিস্টেম তাই গুগল চাইছিল যে আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কাজ করবে। সেই লক্ষ্যে ২০০৭ সালে গুগল প্রতিষ্ঠা করে ওপেন হ্যান্ডসেট এলায়েন্স যেটি টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল কোম্পানির সমন¦য়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান যেখানে ব্রডকম কর্পোরেশন, গুগল, এইচটিসি, ইন্টেল, এলজি, মার্ভেল টেকনোলজি গ্রæপ, মটোরোলা, এনভিডিয়া, কোয়ালকম, স্যামস্যাং ইলেক্ট্রনিকস, স্প্রিন্ট নেক্সটেল, টি-মোবাইল এবং টেক্সাস ইন্সট্রু মেন্ট-এর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে। এর উদ্দেশ্য হলো মুক্ত ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট প্লাটফর্ম তৈরি করা। বর্তমানে প্রায় ৮৪টি প্রতিষ্ঠান এর সদস্য। প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ছাড়া স্মার্টফোনটি ছিল এইচটিসি ড্রিম যা ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর ছাড়া হয়েছিল। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ওপেন হ্যান্ডসেট এলায়েন্স-এর তত্ত¡াবধানে চললেও এটি ডেভলপমেন্টের শর্ত কিন্তু গুগল-এর হাতে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং-এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হচ্ছে এর ফিচার। এটি মূলত টাচ স্ক্রিনে ব্যবহার উপযোগী একটি আধুনিক সিস্টেম। তবে বর্তমানে এটি টিভি, ক্যামেরা ও ঘড়িতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েডকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর অ্যাপ।
আমরা কম্পিউটারে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করি। প্লাটফর্ম অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। যেমন, উইন্ডোজের জন্য তৈরি সফটওয়্যার ম্যাক বা লিনাক্সে চলবে না। তেমনি আইফোনের জন্য তৈরি সফটওয়্যার অ্যান্ড্রয়েডে চলবে না। অ্যান্ড্রয়েড ফোন বা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলে এমন সফটওয়্যার, গেম, উইজেট বা অ্যাপসগুলোই হলো অ্যান্ড্রয়েড এপ্লিকেশন বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। গুগল অ্যাপ তৈরি করা ডেভলাপারদের জন্য খুব সহজ করে দিয়েছে অ্যান্ড্রয়েড স্টুডিও প্লাটফর্ম। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোডিং না জেনেও সাধারণ মানের অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব। যঃঃঢ়ং://ঃযঁহশধনষব.পড়স এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার অ্যাপ তৈরি করতে পারবেন। আর অ্যাপ ভার্চুয়ালি চালাতে চাইলে যঃঃঢ়ং://িি.িমবহুসড়ঃরড়হ.পড়স সাইট অথবা অ্যান্ড্রয়েড ইমুলেটর ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপগুলো সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য রয়েছে প্লেস্টোর। অ্যান্ড্রয়েডের আরেকটি বিষয় হলো এপ্লিকেশন চলে স্যান্ডবক্সে যার মানে হলো এর অ্যাপগুলো চলার জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। ব্যবহারকারী চাইলে কোনো এপ্লিকেশন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তাকে বিশেষ পারমিশন অ্যালাও বা ডিজঅ্যালাও করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ফেসবুক এপ্লিকেশনের ক্যামেরার ও লোকেশনের পারমিশন বন্ধ করে দেন তাহলে এপ্লিকেশনটি আপনার ডিভাইসের ক্যামেরা ও জিপিএস লোকেশন ব্যবহার করতে পারবে না। আবার সেটি আল্যাও করে দিলে এপ্লিকেশনটি আপনার ডিভাইসের ঐ হার্ডওয়্যারগুলোর সম্পূর্ণ ব্যবহার করার ক্ষমতা পাবে। এখানেই চিন্তার বিষয় কারণ একজন হ্যাকার ম্যালিশিয়াস অ্যাপ ব্যবহার করে আপনার মোবাইলের হার্ডওয়্যার এক্সেস নিতে পারে। এক গবেষণায় জানা গেছে, ৭৯ শতাংশ ম্যালওয়্যার তৈরির পেছনে অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন দায়ী। যেকোনো অ্যাপ ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই তার পারমিশন চেক করতে হবে। আপনি যদি কোনো অ্যাপের ব্যাপারে সন্দেহ করেন তাহলে যঃঃঢ়ং://ধঢ়ঢ়পৎরঃরয়ঁব.নড়ড়ুধষষবহ.পড়স/ এই সাইটে গিয়ে অ্যাপটি এনালাইস করে দেখতে পারেন। এখানে আপনার অ্যাপটি ইন্সটল করলে কী কী পারমিশন দিতে হবে তা আগে থেকেই জানা যাবে। আজ এই পর্যন্ত।
আগামী পর্বে অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন ভার্সন, রুট, ফøাশিং ও ম্যালওয়্যার সম্পর্কে জানব।