‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ যেভাবে কাজ করবে

52

অ্যান্টি রেপ ডিভাইস। এটি কাপড়, গাড়ির চাবির রিংয়ের সঙ্গে ব্যবহার করা যায়। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ নারীদের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ধর্ষকদের মাঝেও এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াবে। সহজে আর কেউ ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ হবে না, এমটাই মনে করেন মানবাধিকার কর্মীসহ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ ব্যবহারে রাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই ডিভাইসের সঙ্গে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতীয় জরুরি সেবা সংযুক্ত করতে পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে।
অ্যান্টি রেপ ডিভাইস একটি ধর্ষণবিরোধী তারবিহীন যন্ত্রাংশ, যা নারীরা জুয়েলারি (অলঙ্কার) হিসেবে বা পরিধেয় বস্ত্রের সঙ্গে ব্যবহার করে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে পারে। ধর্ষণ প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি ডিভাইস তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সাংকেতিক বার্তা দিতে পারদর্শী এমন একটি ডিভাইস বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বলে তথ্য ও প্রযুক্তিবিদরা দাবি করেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
প্রথম দিকে আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব ডিভাইস প্রস্তুত করেন। পরে ২০১৭ সালে এগুলো বাণিজ্যিকভাবে তৈরি শুরু হয়। আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ভারতে এই ডিভাইসগুলো ব্যাপকহারে বিক্রি হয়ে থাকে।
অ্যান্টি রেপ ডিভাইস একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস। হাত ঘড়ি কিংবা আঙ্গুলে রিং হিসেবে পরা যায়, গলায় যেকোনও চেইনের সঙ্গে বা কোমড়ে রাখা যায়, আবার পরিধেয়ও বস্ত্র এবং ব্যাগের ভেতরেও রাখা যায়।
তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘এটি মূলত একটি যন্ত্রাংশ। এটির সঙ্গে অন্য একটি যন্ত্রের সংযোগ দেওয়া থাকবে। যখন ভিকটিম আক্রান্ত হবেন, তখন তিনি বাটন চেপে পুলিশের সহায়তা চাইতে পারবেন, অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবেও পুলিশের কাছে বার্তা চলে যেতে পারে। তখন পুলিশ ডিভাইসটি ট্র্যাকিং করে ভিকটিমকে উদ্ধার করবে। এছাড়া এটি অ্যালার্ম দিতে সক্ষম। মোবাইলের সঙ্গে সংযোগ করা গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশের কাছে ফোন যাবে, অথবা জাতীয় জরুরি সেবার সঙ্গে সংযোগ দেওয়া থাকলে সেখানেও কল চেলে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। তবে ডিভাইসটি সবার পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব কিনা, সেটিও ভেবে দেখতে হবে।’
২০০১ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী শতকরা ২০ ভাগ নারী তাদের জীবনে কম করে একবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, বা তাদেরকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। আফ্রিকার দেশগুলোতে ধর্ষণের এই মহামারি আরও বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় এই ডিভাইস ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়। দেশটির নারীদের যুক্তি ছিল যে, নারীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অন্যান্য সহিংস ঘটনা রোধ বা হ্রাস করার জন্য আইনি ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। তাই এই ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক। এরপর দেশটিতে ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ ব্যবহার শুরু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা এই ডিভাইস ব্যবহার করে সুফল পেয়েছে বলেও দেশটির বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এরপর ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেও এই ডিভাইস ব্যবহার শুরু হয়।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ, যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে আসক। সর্বশেষ রাজধানীর একটি সড়কের পাশে ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ১২ জানুয়ারি ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ সরবরাহের নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে রিট করে মানাবিধাকর সংগঠন লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (বøাস্ট) ও চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।
দেশে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে নারীদের ‘অ্যা ন্টি রেপ ডিভাইস’ সরবরাহের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যা ন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (বøাস্ট) ও চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন রিট দায়েরের পর গত ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই রিটের শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ নারীরা ব্যবহার করলে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ কমে আসবে। এটি নারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গলায় বা কোমড়ে পরে রাখতে পারবেন। কখনও অ্যাটাক হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি অ্যালার্ম দেবে এবং ৯৯৯ -এ কল চলে যাবে। এভাবে ভিকটিমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন। আমরা আদালতকে এটা বলেছি। আদালত আমাদের শুনানি শেষে কিমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ কমিটি ৬০ দিনের মধ্যে তাদের মতামত আদালতে দাখিল করবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ ব্যবহার করে। এরমধ্যে ভারত, আমেরিকা এবং ইউরোপের অনেকগুলো দেশের নারীরা এই ডিভাইসটি ব্যবহার করে। এগুলো অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়, দাম এক থেকে দেড় ডলারের মধ্যে। আমরা ডিভাইসটিকে ৯৯৯- এর সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছি। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এই ডিভাইস ব্যবহারের জন্য শিক্ষিত হওয়ার দরকার নেই। অর্থবিত্ত থাকাও দরকার নেই। এটি কম দামে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি, এটি দাম এক থেকে দেড় ডলার। এর চেয়ে কম রেটেও পাওয়া যায়।
রিটে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রিটে বিদেশ থেকে ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ আনতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়,‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ কোনও নারী তার শরীরে বহন করার সময় কেউ তাকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করলে সংক্রিয়ভাবে ৯৯৯- এ কল চলে যাবে। এটা উন্নত দেশে ব্যবহার করা হয়।