অস্টিওআর্থ্রাইটিস

134

অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো অস্থিসন্ধির তরুণাস্থির ক্ষয়জনিত একটি রোগ। সাধারণত বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশী দেখা যায় তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অল্প বয়সেও এই রোগ হতে পারে। বিশ্ব আর্থ্রাইটিস সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ৩ কোটির উপর মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। পৃথিবীর ৪৫ বছর ঊর্ধ্ব পুরুষ ও ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব মহিলাদের শতকরা ১০ ভাগই অত্রিওয়ারথ্রিটিসে আক্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পরেন। আমাদের বাংলাদেশেও বর্তমানে ৪৫ বছর ঊর্ধ্ব পুরুষ ও মাহিলাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৫ জনের ক্ষেত্রেই এর প্রাথমিক লক্ষন পাওয়া যায়।
আমাদের অস্থিসন্ধি যে হাড় দিয়ে গঠিত হয় তাদের মাথা খুব মসৃণ, নরম ও চকচকে তরুণাস্থি দিয়ে ঢাকা থাকে। এই তরুণাস্থি দেহের ভারবহনে এবং অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক নড়াচড়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন কারণে এই তরুণাস্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্রমে ক্রমে তা অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগে রূপ নেয়। আমাদের দেহের যে কোন জোড়ায় অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে। তবে সাধারণত হাঁটু, কোমরের জোড়া, হাত এবং শিড়দাড়ায় এটি বেশি হয়।
বিভিন্ন কারণে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে। বয়সের কারণে বিশেষ করে বয়স্ক মহিলাদের এই রোগ দেখা যায়। স্থূলতা এই রোগের অন্যতম কারণ। এছাড়াও কোন কোন সময়ে বংশগত কারণে, কিছু ভিটামিনের অভাবে, অস্থিসন্ধির অস্বাভাবিকতায়, পূর্বে আঘাতপ্রাপ্ত হলে ও অন্যান্য কারণে এই রোগ হতে পারে।
সাধারণত অস্থিসন্ধির ব্যথার উপসর্গ নিয়ে এই রোগীরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কোন কোন সময়ে ব্যাথা এতই তীব্র হয় যে তা রোগীদের রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়া অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, আওয়াজ করা, ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তভাব ও দৈনন্দিন কাজে অক্ষমতার জন্য রোগীরা ডাক্তারের কাছে যান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসায়ও অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জীবনযাত্রা পরিবর্তন, রোগ সম্পর্কে শিক্ষা, স্থূলতা থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ওয়াকিং এইড (ছড়ি) ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া সাধারণ ব্যথানাশক ট্যাবলেট বা মলম, ব্যয়াম ও প্রয়োজনমত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এই রোগ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া কিছু আধুনিক ইঞ্জেকশন পদ্ধতি যেমন পি.আর.পি থেরাপি, স্টেম সেল থেরাপির মাধ্যমে এই রোগ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে কখনো কখনো রোগ জটিলাকার ধারণ করলে সার্জিক্যাল ইন্টারভেনসনের প্রয়োজন পড়ে। আর্থ্রোস্কপিক ইন্টারভেনসন, অস্টিয়টমি, আর্থোপ্লাস্টি (অস্থিসন্ধি বদল) ইত্যাদি আধুনিক সার্জারির মাধ্যমে অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগীদেরকে ব্যথামুক্ত জীবনে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব।
এবারের বিশ্ব আরথ্রাইটিস দিবসের মূল মন্ত্র হল ‘Dont delay, connect today’ অর্থাৎ দেরি না করে আজই পরামর্শ করুন। কোন জায়গার বার বার ব্যথা বা হাল্কা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ব্যথাকে অবজ্ঞা না করে অতি সত্বর ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন, আর্থ্রাইটিস মুক্ত জীবন যাপন করুন।

লেখক :
ডা. মো. জাবেদ জাহাঙ্গীর তুহিন
এমবিবিএস, এম.এস (অর্থো)
অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম