অশান্ত দিল্লিতে মৃত্যু বেড়ে ২৭

17

মৃত্যুমিছিল আটকানো যাচ্ছে না রাজধানী দিল্লতে। বুধবার সকালে আরও ৫ জনের মৃৃত্যুর খবর এসেছে সেখান থেকে। তাতে চার দিনের মাথায় সেখানে মৃৃত্যুসংখ্যা গিয়ে ঠেকল ২৭-এ। আহতের সংখ্যাও ২০০-র কাছাকাছি।
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩। এ দিন সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় আরও চার জনকে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে, তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আরও একজনের মৃৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এমডি সুনীলকুমার গৌতম। বেলা বাড়লে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।দুপুরে চাঁদ বাগ থেকে এক গোয়েন্দা অফিসারের দেহ উদ্ধার হয়। তার পর লোকনায়ক হাসপাতালে আরও দু’জনের মৃৃত্যু হয়।
মৃৃত্যুসংখ্যা লাফিয়ে বাড়ার পাশাপাশি, এখনও দিল্লিতে হিংসা অব্যাহত। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টে থেকে নাগাদ নতুন করে পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয় উত্তর-পূর্বের ব্রহ্মপুরী-মুস্তাফাবাদ এলাকায়। গোকুলপুরীতে একটি পুরনো জিনিসপত্রের দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গতকাল এনডিটিভির অনলাইন সংস্করণে বলা হয়, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান অজিত। সিলামপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুর ও গোকুলপুরি চক পরিদর্শন করেন তিনি। রাজধানীতে সংঘটিত সহিংসতার বিষয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি আজ বৈঠকে বসবে। দোভাল পরিস্থিতি নিয়ে কমিটির কাছে তথ্য তুলে ধরবেন।
দিল্লি হাইকোর্ট মঙ্গলবার মধ্যরাতে পুলিশকে মানুষের নিরাপদ চলাচল ও আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। দুজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চটি বিচারপতি এস মুরলিধরের বাড়িতে আদালত বসিয়ে শুনানি করেন। নিরাপদ চলাচল ও জরুরি চিকিৎসকের বিষয়ে এক জরুরি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে এই আদালত বসিয়ে শুনানি করা হয়। আজ স্থানীয় সময় বেলা সোয়া দুইটায় আদালত মামলাটি আবার নিয়ে বিচারকাজ পরিচালনা করবেন।
মঙ্গলবার রাতে মূলত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীরা বড় আকারে সমবেত হয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনের সামনে। সহিংসতার নেপথ্যে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানায় তারা। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় পুলিশ জলকামানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে।
সংঘর্ষের দিন রাস্তায় লাঠিসোঁটায় সজ্জিত লোকেদের দেখা যায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন দোকান। সংঘাত সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করার আরজি খারিজ করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয় হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকায় সেনা নামানোর প্রয়োজন হবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্যেই দিল্লিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। মঙ্গলবার প্রায় সারা দিনই উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক জায়গায় একের পর এক সংঘর্ষ ঘটতে থাকে। আহত ব্যক্তিদের অনেকে পুলিশ সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন রয়েছে ৩৫ কোম্পানি আধা সেনা। কালকের ঘটনার পরই উত্তর-পূর্ব দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।