অর্ধকোটি টাকা ও মালামাল নিয়ে উধাও যুবক

27

চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সাথে প্রতারণা করে অর্ধকোটি টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে উধাও হয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার এক যুবক। ব্যবসায়ীদের সাথে বিভিন্ন কৌশলে সম্পর্ক স্থাপন করে বিভিন্ন আশ্বাসে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছে সে। তার নাম মো. তোফাজ্জল হোসেন তালুকদার প্রকাশ রিমন (২৭)। সে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ড এলাকার হাকিম বক্সের পুত্র। সর্বশেষ মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে গিয়ে বেশ কয়েকজন প্রবাসী ব্যবসায়ীর সাথেও প্রতারণা করে অর্ধকোটি টাকা সহ মূল্যবান সরঞ্জাম হাতিয়ে নিয়েছেন। এই নিয়ে চেক জালিয়াতি, প্রতারণা সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় করা মামলায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে। সর্বশেষ রাঙ্গুনিয়া থানায় করা একটি মামলায়ও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দল গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ চালিয়ে আসছে। তাকে আইনের আওতায় আনা গেলে প্রতারকচক্রের বাকী সদস্যদেরও ধরা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
চট্টগ্রামে ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতারক যুবক রিমন খুব সুকৌশলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তাদের বিশ্বস্থতা অর্জন করেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে ভুয়া চেক দিয়ে প্রতারণা করে পালিয়ে যান। সম্প্রতি সে ভিজিট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই যায়। সেখানেও সে প্রতারণা করে পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও ব্যবসায়ীদের কাজ থেকে মূল্যবান অলঙ্কার, স্মার্ট মুঠোফোন, মেমোরি কার্ড, প্যাকেটজাত দুধ, কসমেটিকস সামগ্রী সহ আরও বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস পত্র সবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয়। তাদের একজন মোহাম্মদ রাসেল করিম। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ায় হলেও তিনি প্রবাসে ব্যবসা করেন। একই গ্রামের যুবক হওয়ায় রাসেল করিমও তাকে প্রবাসে বেড়াতে গেলে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেন।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, রিমনকে বিশ্বাস করে আমার বাংলাদেশী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৩ লাখ টাকা মূল্যের ৬ হাজার পিস মেমোরি কার্ড, সাড়ে ৬ লাখ টাকা মূল্যের এপ্যাল ওয়াচ সিরিজ-৪ মডেলের ৪টি, এয়ার পোর্ডস মডেলের ৪টি এবং সেমসাং এস মডেলের ৪টি সহ মোট ১২টি মুঠোফোন ছাড়াও মূল্যবান গহনা ও অন্যান্য সরঞ্জাম দেশে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সে নেয়। এছাড়াও একই ভাবে অন্যান্য আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও রিমন মূল্যবান সরঞ্জাম সংগ্রহ করে দেশে ফিরে। সবমিলিয়ে নগদ টাকা সহ অর্ধকোটি টাকার মালামাল নিয়ে দেশে ফিরেই তিনি লাপাত্তা হয়ে আমি সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সর্বস্বান্ত করে দেয়। এই বিষয়ে দীর্ঘদিন খুঁজাখুজি করে তাকে না পেয়ে খবর নিয়ে দেখি শুধু আমাদের সাথে নয়, দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে সে একই ভাবে প্রতারণা করে মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি এই বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ইত্যাদি চত্বর এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রহমান সওদাগর নামে এক ব্যক্তিও তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, রিমন আমার দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় হয়। দীর্ঘদিন ধরে সে আমার সাথে আত্মীয়তার বাইরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরে ইতালি যাওয়ার নাম করে ধার হিসেবে তিন ধাপে আমার কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। শুধু আমার সাথে নয়, সে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গুনিয়ার অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ীর সাথে প্রতারণা করে তাদের সর্বস্বান্ত করেছে ।
তার বিষয়ে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের তার নিজ বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিমন একজন পেশাদার প্রতারক। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় নানা প্রতারণা মামলা রয়েছে। এই নিয়ে সে বেশ কয়েকবার জেলও কেটেছে।
এদিকে এই প্রতারককে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল করিম। তিনি প্রতারক রিমনের সন্ধান পেলে ০১৮৫৪-৬৬৬৬৩০ এবং ০১৮৪৮-১৫৪৭৪৬ নাম্বারে যোগাযোগের অনুরোধ করেন।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা বলেন, প্রতারণা মামলায় উপজেলার পদুয়ার তোফাজ্জল হোসেন তালুকদার ওরপে রিমন নামে এক ব্যক্তির পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।