অর্থ সংকটে শতবর্ষী চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র চলছে খুড়িয়ে

133

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের লিচু বাগান খ্রীষ্টিয়ান কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রের চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। বিদেশী সাহায্য বন্ধ, সরকারি ভাবে দেশ থেকে কুষ্ট রোগ নিমূল ঘোষনায়হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হওযার উপক্রম দেখা দিয়েছে। কুষ্ট হাসপাতালে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে কুষ্ট রোগীদেও আগের মত চিকিৎসা ব্যায় ভার বহন করতে পারছেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে কমপক্ষে ৩৫ জন রোগী যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদের মতে মরলে এখানে মরব । বাইরে আমাদেও কেউ ছুয়ে দেখবেনা। আবার অনেক কুষ্ট রোগী বলেছেন আমরা এ হাসপাতালে ৩০/৩৫ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা নিয়ে কুষ্ট রোগ থেকে পুরাপুরি ভাল হয়েছি। সমাজে আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। আমাদেরকে অভিশপ্ত বলে। আমাদের ঘর বাড়ি থাকলেও আমাদের সেখানে বসবাস করতে দেয়না। এখানে আমাদের বাচা মরা। আমাদের বাচতে সমাজের বিত্তশালী ও বিদেশী সাহায্যকারী এনজিওদের এগিয়ে আসলে আমরা প্রাণে রক্ষা পাব। হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষনা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জিরো লেপ্রসীর (কুষ্ঠ) যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেই লক্ষ্যে এই চিকিৎসা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছেন। ইংল্যান্ড ভিত্তিক দ্যা লেপ্রসী মিশন এর অর্থায়নে এই কুষ্ঠু হাসপাতাল পরিচালিত হতো। কিন্তু ১৯৯৪ সালের পর থেকে তাদের অর্থায়ন কমিয়ে দেয় এবং ২০১০ সালের পর থেকে তাদের অর্থায়ন একেবারে বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে কোন রকম সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহায়তা ছাড়া অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। এরপরও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ হাসপাতাল এর রোগীদের চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে ঔষধ এবং খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া কুষ্ঠ রোগীদের জন্য একটা আশ্রম গড়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সাহায্য ছাড়া এই কার্যক্রম চালানো কঠিন। সেই ক্ষেত্রে বিত্তবান লোকেরা এগিয়ে আসলে কুষ্ঠ রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না। তিনি বলেন এ কুষ্ট হাসপাতালটি বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র হাসপাতাল। এটিকে বাচিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়,শতবর্ষী ৬০ শয্যা বিশিষ্ট চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্ঠিয়ান কুষ্ঠ হাসপাতাল। কুষ্ঠ রোগিকে পরিবারের একজন ভেবে চিকিৎসার সব উপকরন ও নিবিড় ভালবাসায় বদলে দিচ্ছে দেশের শত শত কুষ্ঠ রোগিদের ভাগ্য। চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্ঠিয়ান কুষ্ঠ হাসপাতাল ১৯১৩ সালে ১৩ জানুয়ারি প্রতিষ্টা লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত কুষ্ঠ রোগি চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছে নিজ পরিবারে। চন্দ্রঘোনা কুষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা মো. আফজাল জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ২৮ জন রোগি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মধ্যে পুরুষ ২০ জন, মহিলা ৮ জন রোগি। তাদের চিকিৎসা চলছে কোন রকমে। চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের প্রোগাম অফিসার বিজয় মার্মা জানান, ১৯২০ সাল থেকে তিন পাবর্ত্যজেলার উপজাতীয়দের মাঝে কুষ্ট রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দেওয়ায় কুষ্ট রোগ নিরসনে নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপতালটি বৃহৎ পরিসরে আলোর মুখ দেখে। সে সময়ে উপজাতীয় দের কুষ্ঠ রোগীদের জন্য আলাদা আলাদা ঘরে রেখে চিকৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলা হতো। সমাাজে কুষ্ঠ রোগিদের জায়গা না হওয়ায় সব কুষ্ঠ রোগিদের একসাথে বসবাসের জন্য হাসপাতাল কতৃপক্ষ কুষ্ট পল্লী তৈরী করে। সাড়ে ৪ একর পাহাড়ি জায়গা নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের শেষ সিমান্তে জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় ঝুম পাড়া কুষ্ঠ পল্লী আলোর মুখ দেখে। সেখান থেকে প্রায় ৩শ কুষ্ট রোগি বর্তমানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের কুষ্ট রোগিদের একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে শতবর্ষী হাসপতাল রুপে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। অর্থনৈতিক সংকট থাকার কারণে বর্তমানে হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবা কার্য্যক্রম মারাত্নক ব্যাহত হচ্ছে। ১৯৯৪ সাল থেকে বিদেশী ফান্ড বন্ধ হওয়ার পর চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে কুষ্ট রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছে। তিনি জানান, আগের মত বেসরকারী অর্থ সাহার্যকারী প্রতিষ্ঠান কুষ্ট রোগিদের চিকিৎসা জন্য প্রকল্প দিতে চায়না। অনেকের ধারণা দেশে কুষ্ট রোগি নেই। এখন দাতা সাহা অর্থৃ সাহায্য দেয় রোহিঙ্গাদের উন্নয়নের জন্য। সেজন্য আমরা কুষ্ট হাসপাতাল চাল্লাচ্ছি আমাদের খৃীষ্টিয়ান হাসপাতালের নিজস্ব অর্থ থেকে। এ বছর হাসপাতাল থেকে ৪২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা দিয়ে কুষ্ট রোগীদের চিকিৎসা সেবা সহ তাদের নানা উপকরণ দেয়া হয়েছে। যে কারণে কুষ্ট হাসপাতালের অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে খ্রীষ্টিানহাসপাতালে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ফান্ড সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করেছি। ফান্ড পেলে এ দুরবস্থা কেটে যাবে। কুষ্ঠ হাসপতালের ৬টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়, পুরুষ ও মহিলা কুষ্ঠ রোগিরা এক সাথে খোশ গল্পে মেতে রয়েছে। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন কুষ্ঠ রোগি হাসপাতালের বারান্দায় কোলাহল মুখর হয়ে উঠলেও নিজেদের মাঝে দুরাগ্য কুষ্ঠ রোগ বহন করছে বোজাই যাচ্ছেনা। কারো পায়ে হাতে আঙ্গুল নেই, কারো হাতে ঘায়ের লালচে ক্ষত, পায়ের তলায়, চোখের নিচে উপরে, হাঠুতে আবার কারো শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন সব মিলিয়ে কুষ্ট রোগের ভয়াবহ ক্ষত বিক্ষত শরীর নিয়ে এদের না বলা কষ্ট নিয়ে দিন গুনছে কুষ্ট রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। হাসপাতালের ৪ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কুষ্ঠ রোগী আনোয়ার হোসেন এবং শেফালি আক্তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, পারিবারিক পরিবেশে আন্তরিকতার সাথে তাঁরা এই কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে আসছেন। এখানে আমরা অনেক ভাল আছি। আমরা সমাজের অংশ। আমাদের বাচাতে সরকার সহ বিদেশী সাহায্য প্রদানের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। তারা জানায়, প্রথমে আমার পায়ের তলায় ঘা দেখা দিয়েছিল এরপর পায়ের ৩টি আঙ্গুল ক্ষত বিক্ষত হয়ে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবার ও সমাজে মূখ ফিরিয়ে নেয়।
আমরা নাকি অভিশপ্ত। এরপর এ হাসপাতালে চলে আসা। হাসপাতালের ডাক্তারদের সেবায় আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থবোধ করছি। হাসপতাল কর্তৃপক্ষের অর্থ সংকটে আমরা আগের মত চিকিৎসা সেবা বা ওষুধ পাচ্ছিনা। সাথে খাওয়ার সমস্যায় হাসপাতালটি বন্ধ হওয়ার অবস্থা দেখা দিয়েছে। আমরা কোথায় যাব এ জঠিল রোগ নিয়ে।