অরক্ষিত ক্যাম্প, কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা

43

উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কৌশলে জীবন ঝুঁকি নিয়ে তারা ক্যাম্প ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ক্যাম্প অরক্ষিত হওয়ার সুবাদে সহজে বেরিয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। তারা শুধু ক্যাম্প থেকে পালাচ্ছে তা নয়, তারা বাংলাদেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায়ও পাড়ি জমাচ্ছে। যথাযথ তদারকির অভাবে এবং প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার সুযোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিনদিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। আর সুযোগ বুঝে ক্যাম্প থেকে দলবেঁধে পালাচ্ছে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে ঠাঁই হওয়া এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। সাম্প্রতিক সময়ে দলে দলে ধরা পড়ার ঘটনাগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো ক্যাম্পের সুরক্ষা বেষ্টনী জোরদার না করলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে যাবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।
সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে গত কয়েকদিনে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। কাগজে-কলমে পাঁচ শতাধিক ধরা পড়লেও নানা কৌশলে বাংলাদেশ ছেড়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা- এমন অভিমত সংশ্লিষ্টদের। এছাড়াও বাংলাদেশের নানান জেলায় ছড়িয়ে গেছে লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী- এমন ধারণা সংশ্লিষ্টদের। প্রতিদিনই নানান কৌশলে ক্যাম্প থেকে পালাচ্ছে তারা। যথাযথ মনিটরিং, প্রশাসনিক উদাসীনতার পাশাপাশি লোকবল স্বল্পতা, বিভিন্ন এনজিও-আইএনজিও’র বাড়াবাড়ি ও সহযোগিতায় সহজেই ক্যাম্প ত্যাগ করছে এসব শরণার্থী। বাংলাদেশ এবং বিদেশে স্থায়ী হতে তাদের এই তৎপরতা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়িয়ে পাহাড়-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারা এখন স্থানীয় ভাষা শিখে গেছে। পোশাক স্থানীয়দের মতো পরিধান করছে। এ ছাড়া অনেকে স্থানীয়দের সাথে করে বা স্থানীয়দের ভীড়ে কৌশলে পালানোর চেষ্টা করছে।
এ পর্যন্ত বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে আটক রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই নারী। এছাড়াও ইয়াবাসহ নানান মাদকের পাচারকালেও রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পড়ছে। তাদের এমন বেপরোয়া আচরণে প্রশাসনের কপালেও ভাঁজ পড়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের বিয়েও করছে রোহিঙ্গারা; মিশে যাচ্ছে স্থানীয়দের সাথে। এই ধারা চলতে থাকলেও ভবিষ্যতে তারা দেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে এখন মানব পাচারকারীদের তৎপরতাও বেড়েছে। তাছাড়া কিছু রোহিঙ্গা আছে যাদের স্বজন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত স্বজনদের মালয়েশিয়া নেয়ার জন্য যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রেও মানব পাচারকারীরা মধ্যস্থতা করছে বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থা নারী জাগরণ সংস্থা। এই সংস্থার প্রধান নির্বাহী শিউলি শর্মা বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের অনেকেই মালয়েশিয়া গিয়ে বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর। তারা মনে করে যে মালয়েশিয়া যেতে পারলে তাদের ভালো বিয়ে হবে। এ ধারণা তাদের ঢুকিয়ে দিয়েছে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট। ফলে তাদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহী। তিনি নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করার উপর জোর দেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় পাচার হচ্ছে। যারা স্বেচ্ছায় পালিয়ে যেতে চায় তাদের ধরা কঠিন। মধ্যে মানবপাচারকারীরা যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। রোহিঙ্গারা রাস্তা, পাহাড়, জঙ্গল, খাল-বিল দিয়েও পালিয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হলে সেখান থেকে সহজে বের হওয়া সম্ভব হবে না।