অভিযোগ প্রমাণিত হলে চাকরি যেতে পারে ডিসি কবীরের

39

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, ‘জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে সরকার গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে চাকরি থেকে ডিসমিস করা হতে পারে। আবার পদাবনতিও হতে পারে। কোনও ধরনের ঢিলেমি হওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদন্ড হবে’।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠক নিয়ে ব্রিফ করার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন। আহমেদ কবীর বর্তমানে উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, মন্ত্রিপরিষদ গঠিত তদন্ত কমিটিকে যে টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) দেওয়া হয়েছে, তাতে শুধু ভিডিও সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি সম্পত্তির অপব্যবহারসহ আরও যেসব অভিযোগ আছে সে ব্যাপারে কি হবে। এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘কমিটি যদি মনে করে অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক বিষয়কে টেনে আনা প্রয়োজন অথবা এই বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে অন্য কোনো বিষয় এসে যায়, তাহলে সেগুলোও তারা তদন্ত করতে পারবে। প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করবেন যে উনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগও পাওয়া গেছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিটি প্রতিবেদন দেবে’।
আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
উল্লেখ্য, জামালপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আহমেদ কবীরের একটি ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গত ২২ আগস্ট দিবাগত রাতে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওটিতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তার অফিসের এক নারী অফিস সহায়ককে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওটি সাজানো বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। তবে এই ঘটনার পর শনিবার তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যুক্ত করা হয়েছে। আহমেদ কবীরের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে সরকার। কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত রবিবার জারি করা এক আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা) মুশফিকুর রহমানকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একজন প্রতিনিধি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা কেউ উপসচিব পদমর্যাদার নিচে হতে পারবেন না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখার উপসচিব সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আদেশে বলা হয়েছে, কমিটি প্রকাশিত ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এছাড়া কমিটি প্রয়োজনে সরেজমিনে পরিদর্শন করবে এবং ভিডিওটি যাচাইয়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবে। তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট মতামত দিতে হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, আহমেদ কবীরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি তাকে দেওয়া শুদ্ধাচার সনদও প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। আহমেদ কবীর ও নারী অফিস সহকারী দু’জনের বিরুদ্ধেই চাকরির বিধি মেনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।