অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিকারে

47

জনমনে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে জীবাণুনাশক পণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা হয়রানি করার পাশাপাশি হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনদিনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মূল্যবৃদ্ধির অন্তত এক হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে অধিদপ্তরটি ইতিমধ্যে দক্ষতা দেখালেও করোনার প্রভাব প্রতিরোধে কিছুই করতে পারছে না। লোকবল সংকটে অধিদপ্তরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরকার সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপের কথা জানিয়ে আসছে। এ অবস্থায় প্রশাসন কৃত্রিম সংকট তৈরির প্রবণতা রোধ করতে প্রস্তুত রয়েছে। সচরাচর শহরের মধ্যেই প্রশাসনের অভিযানগুলো বেশি হয়ে থাকে। যার কারণে শহরের ভোক্তারা দ্রব্যমূল্য বা পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতারিত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের ক্ষেত্রে গ্রামের লোকজন অনেক পিছিয়ে ছিলো। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবকে পূঁজি করে দাম বাড়ানোর ফলে চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা থেকে একযোগে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত এক হাজার অভিযোগ এসেছে অধিদপ্তরটির চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে মিরসরাই উপজেলা থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলা থেকে বৃহস্পতিবার বিকালের পর থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে। বিভিন্ন পন্যের দাম বেশি নেয়া, হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক, ডেটল ইত্যাদি না পাওয়ার অভিযোগ বেশি। এমনকি ডেটল সাবানের দামও ১০ টাকা করে বেশি নেয়ার অভিযোগ এসেছে। এরমধ্যে এক হাজারের বেশি ফোনে অভিযোগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। ভোক্তারা আশা-ভরসার জায়গা থেকে আমাদের ফোন করেন, অভিযোগ করেন। কিন্তু এতোগুলো অভিযোগ একসাথে সমাধান করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব না।
তিনি বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরোধ করা এবং করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষাকারী জিনিসপত্রের চাহিদা ও দাম ন্যায়সঙ্গত রাখতে। দোকানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা প্রদর্শন, ভাউচার রাখার প্রতি জোর দিচ্ছি। ব্যর্থয় ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
চলমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে কোনও পণ্য অতিরিক্ত ক্রয় না করার জন্য ভোক্তা-সাধারণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। একই সাথে ব্যবসায়ীদের দাম না বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও সামগ্রি মজুদ থাকার কথা নিশ্চিত করা হলেও কে শুনে কার কথা। ভোক্তারা যেমন অতিরিক্ত পণ্য কিনছেন তেমনি ব্যবসায়ীরাও বাড়িয়ে দিচ্ছেন দাম। প্রশাসনের নজরে আসলে ব্যবসায়ী সাময়িক দাম কমালেও প্রশাসনের আড়ালে আবার বাড়িয়ে দিচ্ছেন দ্রব্যের দাম।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সংকটময় মুহুর্তে দাম বাড়ানো অত্যন্ত ঘৃণ্যত কাজ। ব্যবসায়ীরা নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাক্স, চাল, ডাল, তেল সবকিছুর দাম বাড়ানো হযেছে। জেলা প্রশাসন নিলিপ্তভাবে সেল্প কোরেন্টাইনে চলে গেছে। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যেহেতু সিংহভাগ পণ্য আমদানি হয়। সেহেতু চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পুরোদেশের বাজারে খারাপ একটা এফেক্ট পড়বে। আশা করবো দ্রæত জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন। না হয় দেশে এটার মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে হাত পরিষ্কার রাখার জীবাণুনাশক হ্যান্ড সেনিটাইজার এবং বিভিন্ন ধরনের মাস্কের। জীবাণুনাশক হিসেবে হেক্সাসল, ডেটল, সেভলন ইত্যাদি পাওয়াটাও দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২-৩ দিন থেকে এগুলোর কোনোটাই পাওয়া যাচ্ছে না নগরীর ফার্মেসিগুলোতে। আর খুব অল্প সংখ্যক পরিমাণে পাওয়া গেলেও, তা ফুরিয়ে যাচ্ছে চোখের পলকেই। ক্রেতারা বেশি দামের তোয়াক্কা না করেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সেগুলো কিনতে।
নগরীর আন্দরকিল্লায় ইফতেখারুল ইসলাম নামের এক কলেজ ছাত্র বলেন, ফেসমাস্ক ও হেক্সিসল কেনার জন্য এসেছিলাম। অনেক্ষণ ধরে বিভিন্ন ফার্মেসিতে ঘুরেও কোথাও হেক্সিসল পায়নি। মাস্ক কিনছি ৫০ টাকা দরে।