অভিযোগগুলো গুরুত্বের সাথে আমলে নিতে হবে

29

চট্টগ্রামে এ প্রথম কোন একটি স্বায়ত্ত¡ শাসিত প্রতিষ্ঠানের সেবার বিষয় নিয়ে একটি গণশুনানীর আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সেবা গ্রহণকারী নাগরিকদের মধ্য থেকে যারা সেবার মান নিয়ে দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন এমন ব্যক্তিসহ অনেকে সরাসরি অভিযোগ দিতে গণশুনানীতে উপস্থিত হয়েছিলেন। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বড় একটি অংশ এ গণশুনানীতে উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বীর উত্তম শাহ আলম মিলনায়তনে এ গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম। চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল আজম নিজামী সভাপতিত্ব করেন। দুদকের গণশুনানিতে উঠে আসে চসিকের নাগরিক সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ। কারো কাছ থেকে ঘুষ দাবি, টাকা না দিলে আবর্জনা না সরানোর, আবার বেশি টাকা নিয়ে কম টাকার রশিদ দেওয়ার অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনি ভূমিদস্যুরা সরকারি জায়গা দখল করে নালা-ভবন নির্মাণ করলেও সিটি কর্পোরেশন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিয়ে প্লট না পাওয়ার কথাও বলেন এক ভুক্তভোগী। এ রকম ৬৯টি অভিযোগ উঠে আসে গণশুনানিতে। এগুলোর বেশিরভাগ নিষ্পত্তির জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দেন দুদক কমিশনার আ ফ ম আমিনুল ইসলাম। এসব অভিযোগের বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে দুদককে পরে অবহিত করার নির্দেশও দেওয়া হয় শুনানিতে। শুনানিতে চসিকের কয়েক কর্মকর্তার কাজ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দুদক কমিশনার। এ গণশুনানীতে যে ব্যাপরটি সবার নজর কেড়েছে, তা হল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারিরা একে অপরের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন। তাদের এ অভিযোগ শুনে অনুষ্ঠানের সভাপতি অনেকটা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কাকে কাকের মাংস খায় না। আমাদের মনে হয়েছে, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জনাব নিজামীর এ উক্তিটি গণশুনানীর সেরা উক্তি ছিল। আমাদের জানা মতে, তিনি ২০১৩-১৪ সালের দিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একজন স্বজ্জন ও বিনয়ী কর্মকর্তা হিসাবে তার বেশ সুনাম ছিল। তিনি ভালোভাবেই জানেন কর্পোরেশনের অন্দরমহলের খবর। এরমধ্যেও তিনি শুনে অবাক হয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা পরস্পর থেকে ঘুষ দাবি করেন। আমরা লক্ষ করে আসছি, বর্তমান মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন কর্পোরেশনের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সচেষ্ট ছিলেন কর্পোরেশনকে ঘুষ-দুর্নীতি মুক্ত করতে। এক্ষেত্রে তিনি প্রকাশ্য ঘোষণাও দিয়েছিলেন, কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিল ব্যবস্থাপনার ঢাল ভেঙ্গে তিনি অভিষ্ঠ্য লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেননি বলে ধারণা করা যায় সোমবারের গণশুনানী থেকে। এরপরও আমরা গনশুনানীতে মেয়রের সাহসী উচ্চারণ ও পদক্ষেপগুলোর যা তিনি বলেছেন-তার প্রশংসা করি। আমরা মনে করি, শুনানীতে যেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এসেছে তাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। দুদক কয়েকটি অভিযোগের তদন্তভার নিজেদের কাঁধে নিলেও অধিকাংশের তদন্তের দায়ভার তুলে দিয়েছেন চসিকের উপর। সুতরাং চসিককে সতর্কতার সাথে স্বচ্ছভাবে তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, মেয়র এক্ষেত্রে বরাবরই তার সততা ও কঠোরতা প্রমাণ করবেন। আমরা এধরনের গণশুনানীকে স্বাগত জানাই, তবে তা যেন শুধু চসিকে সীমাবদ্ধ না থাকে।