অভিনন্দন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন

44

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এর ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পু। অভিনন্দন- মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে। সবচেয়ে বেশি অভিনন্দন পাওয়ার অধিকার যিনি রাখেন তিনি হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দৈনিক পূর্বদেশ পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে সকল জল্পনা ও কল্পনাকে একপাশে রেখে প্রধানমন্ত্রী যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তা চমকই নয়; বরং রাজনৈতিক দুরদর্শিতার আরেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পু নির্বাচিত হলেন এমন এক সময়ে যখন দেশে আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। চলতি বছর বা আগামী বছরের শুরু দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে নানা দেন-দরবার শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসে ততই পারস্পরিক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির ময়দান। উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ রাষ্ট্রপতি থাকলে তিনি অন্তত সব পক্ষের মতামত গ্রহণ করতে পারেন। তিনি সবার কথা শুনতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ জাতীয় একজন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতায় তাঁকে বিদায় নিতে হচ্ছে। তাঁর মতো একজন মানুষ অভিভাবক হিসেবে থাকলে তা দেশের জন্যই কল্যাণকর। যদিও তিনি সব সময় বলে এসেছেন, বঙ্গভবনের জীবন তাঁর কাছে অনেকটাই জেলখানার মতো। আমরা আশা করি, নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পু তাঁর উত্তরসূরির দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রয়াস চালাবেন।
আমরা ইতোমধ্যে যা জেনেছি, তাতে ধারণা করা যায়, জনাব শাহাবুদ্দিন শুধু একজন ব্যক্তিই নন, তার প্রথম পরিচয় তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তাঁর বুকে লালন করেন দেশপ্রেম- আর সেই দেশপ্রেম প্রমাণের মহেন্দ্রক্ষণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে এটাই জাতির প্রত্যাশা। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণার প্রথম দিনেই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাবে প্রকাশ করেছেন তার সেই দেশপ্রেম ও সাহসী উক্তি, একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাঁর এই ঘোষণা জাতির মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। জাতি তাঁর এ ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখবে সেই আশায় বুক বেঁধে আছে।
সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন- এর প্রধান কারন- তিনি একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহধন্য, একজন প্রথিতযশা সাবেক জেলা ও দায়রা জজ, যুক্ত ছিলেন অধ্যাপনা, সাংবাদিকতা ও আইন পেশার সাথে, ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সফল কমিশনার। ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনে। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করলে প্রতিবাদ করে তিনি ৩ বছর জেল খাটেন। চাকরি জীবনে জুডিশিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি কর্মকাÐে অংশগ্রহণে তিনি ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ বটে। তবে তাঁর ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু নির্বাচনকালীন সময়ে তার ইতিবাচক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে একজন আইনবিদ, শিক্ষিত ও প্রশাসকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাস আমাদের বাঙালি জাতিকে আস্থাশীল করে তুলবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অভিষিক্ত। এ অর্জন ধরে রাখতে হলে যে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে পারে দেশের রাজনীতি। রাজনীতিবিদদের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশকে গভীর সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশের এমন অবস্থায় মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের মতো একজন রাষ্ট্রপতি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় থাকার কথা। আমরা আশা করি, তাঁর অভিভাবকত্ব আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সক্ষম হবেন।